বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কমিশনপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের ৬০ দিনের জন্য নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে এই ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে, যা দেশের চলমান আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির জন্য কার্যকর হবে।
মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর), জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব জেতী প্রুর স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে জানানো হয় যে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কমিশনপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের ৬০ দিনের জন্য বিশেষ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। দেশের বর্তমান আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয়। এর পর থেকেই আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। ১৯ জুলাই সেনাবাহিনী মোতায়েন ও কারফিউ জারি করা হয়। বর্তমানে দেশব্যাপী সেনাবাহিনী মোতায়েন রয়েছে এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিবেচনায় তাদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দেওয়া হলো। এই ক্ষমতার অধীনে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা ফৌজদারি কার্যবিধির ১৮৯৮ সালের বিভিন্ন ধারায় বিচার কার্য সম্পাদন করতে পারবেন।
সেনাবাহিনীর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা ‘ফৌজদারি কার্যবিধির, ১৮৯৮’ এর ৬৪, ৬৫, ৮৩, ৮৪, ৮৬, ৯৫(২), ১০০, ১০৫, ১০৭, ১০৯, ১১০, ১২৬, ১২৭, ১২৮, ১৩০, ১৩৩ ও ১৪২ ধারার অপরাধগুলো বিবেচনায় নিতে পারবেন বলে প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে।
আইনের ধারা অনুযায়ী একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের যেসব ক্ষমতা রয়েছে-
ধারা ৬৪ : ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে অপরাধ সংঘটনকারী ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করার বা গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেওয়ার এবং হেফাজতে রাখার ক্ষমতা।
ধারা ৬৫ : গ্রেপ্তার করার ক্ষমতা বা তার উপস্থিতিতে গ্রেপ্তারের নির্দেশনা যার জন্য তিনি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করতে পারেন।
ধারা ৮৩/৮৪/৮৬ : ওয়ারেন্ট অনুমোদন করার ক্ষমতা বা ওয়ারেন্টের অধীনে গ্রেপ্তারকৃত অভিযুক্ত ব্যক্তিকে অপসারণের আদেশ দেওয়ার ক্ষমতা।
ধারা ৯৫(২) : নথিপত্র ইত্যাদির জন্য ডাক ও টেলিগ্রাফ কর্তৃপক্ষের দ্বারা অনুসন্ধান এবং আটক করার ক্ষমতা।
ধারা ১০০ : ভুলভাবে বন্দি ব্যক্তিদের হাজির করার জন্য অনুসন্ধান-ওয়ারেন্ট জারি করার ক্ষমতা।
ধারা ১০৫ : সরাসরি তল্লাশি করার ক্ষমতা, তার (ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি) উপস্থিতিতে যে কোনো স্থানে অনুসন্ধানের জন্য তিনি সার্চ ওয়ারেন্ট জারি করতে পারেন।
ধারা ১০৭ : শান্তি বজায় রাখার জন্য নিরাপত্তার প্রয়োজনীয় ক্ষমতা।
ধারা ১০৯ : ভবঘুরে এবং সন্দেহভাজন ব্যক্তির ভালো আচরণের জন্য নিরাপত্তার প্রয়োজনীর ক্ষমতা।
ধারা ১১০ : ভালো আচরণের জন্য নিরাপত্তা প্রয়োজনীয় ক্ষমতা।
ধারা ১২৬ : জামিনের নিষ্পত্তি করার ক্ষমতা।
ধারা ১২৭ : বেআইনি সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করার আদেশ দানের ক্ষমতা।
ধারা ১২৮ : বেআইনি সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করার জন্য বেসামরিক শক্তি ব্যবহার করার ক্ষমতা।
ধারা ১৩০ : বেআইনি সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করার জন্য সামরিক শক্তি ব্যবহার করার ক্ষমতা।
ধারা ১৩৩ : স্থানীয় উপদ্রব নিয়ন্ত্রণে ক্ষেত্র বিশেষে ব্যবস্থা হিসেবে আদেশ জারি করার ক্ষমতা।
ধারা ১৪২ : জনসাধারণের উপদ্রবের ক্ষেত্রে অবিলম্বে ব্যবস্থা হিসেবে আদেশ জারি করার ক্ষমতা।
এই ধারাগুলো অনুযায়ী, তারা গ্রেপ্তার, অনুসন্ধান, এবং বেআইনি সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করার ক্ষমতা পাবেন। তাদের মোবাইল কোর্ট আইন, ২০০৯-এর আওতায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনারও ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে, যা দেশের বর্তমান আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে সহায়ক হবে। এছাড়াও তারা শান্তি বজায় রাখা, সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের আচরণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারবেন।
সেনাবাহিনীর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা প্রদানের এই সিদ্ধান্ত দেশের বর্তমান সংকটময় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নে সহায়ক হবে বলে আশা করা হচ্ছে। সেনা কর্মকর্তারা মোবাইল কোর্ট পরিচালনা এবং বেআইনি কর্মকাণ্ড দমন করে দেশের আইন-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য কাজ করবেন।
তানভীর মেহেদী, রিলাক্স নিউজ ২৪