নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ এবং অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনে ছাত্র-জনতার অদম্য সংকল্পের প্রশংসা করেন। তিনি উল্লেখ করেন, কিভাবে তাদের অসীম সাহস এবং দৃঢ় প্রত্যয়ে বাংলাদেশ স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থা থেকে মুক্তি পেয়েছে।
ড. ইউনূস তাঁর ভাষণে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিবর্তনের বিষয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, তরুণ সমাজের আন্দোলন প্রথমে বৈষম্যবিরোধী ছিল, যা পরবর্তীতে গণআন্দোলনে রূপ নেয়। তাঁর মতে, এ আন্দোলন বাংলাদেশের মানুষের ঐক্য ও রাজনৈতিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
ভাষণে ড. ইউনূস বলেন, গত জুলাই-আগস্টে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া যুগান্তকারী পরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি আজ বিশ্বসম্প্রদায়ের এই গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চে উপস্থিত হতে পেরেছেন। তিনি বলেন, ছাত্র ও যুব সমাজের আন্দোলন বৈষম্যের বিরুদ্ধে শুরু হলেও ধীরে ধীরে তা গণআন্দোলনে পরিণত হয়। সমগ্র বাংলাদেশবাসী একনায়কতন্ত্র, নিপীড়ন, বৈষম্য, এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়। তিনি আরও বলেন, তরুণ প্রজন্মের দৃঢ় সংকল্প এবং একনিষ্ঠ আন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থার পতন ঘটেছে।
ড. ইউনূস বিশ্বাস করেন, এই আন্দোলন বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য আশার আলো জ্বালিয়েছে। ছাত্র-জনতার ঐক্য ও দৃঢ় প্রত্যয় বাংলাদেশের উন্নয়ন ও রাজনৈতিক অধিকার অর্জনে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
তিনি উল্লেখ করেন, বন্দুকের গুলিকে উপেক্ষা করেও তরুণরা বুক পেতে দাঁড়িয়েছিল এবং তাদের সাহস ও প্রজ্ঞা সারা বিশ্বকে অভিভূত করেছে। তরুণীরা এবং স্কুলপড়ুয়া কিশোর-কিশোরীরাও সাহসিকতার সঙ্গে তাদের জীবন উৎসর্গ করেছে। শত শত মানুষ দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছে এবং হাজারেরও বেশি মানুষ নিজেদের জীবন বিসর্জন দিয়েছে।
ড. ইউনূস আরও বলেন, গণআন্দোলনের সময় জনগণ, বিশেষ করে দিনমজুর এবং মায়েরা, তাঁদের সন্তানদের সঙ্গে একত্রে রাস্তায় নেমে এসেছিলেন। তাঁরা অত্যাচারী রাষ্ট্রযন্ত্রের বিরুদ্ধে শক্ত হাতে লড়াই করে জয় ছিনিয়ে এনেছেন।
ড. ইউনূস তাঁর বক্তব্যে জানান, বাংলাদেশের জনগণের এই আন্দোলন বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে আমাদের দেশকে একটি দায়িত্বশীল জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে। তরুণদের প্রজ্ঞা, সাহস, এবং ঐক্য আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
অনলাইন ডেস্ক