মোমবাতির আলোয় আলোকিত শেরপুরের গারো পাহাড়

আনন্দমুখর পরিবেশের মধ্য দিয়ে শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলার ভারত সীমান্তঘেঁষা বারোমারী সাধু লিওর খ্রিস্টধর্ম পল্লীতে দুদিনব্যাপী বার্ষিক তীর্থোৎসব শুক্রবার দুপুরে শেষ হয়েছে। এর আগে বৃহস্পতিবার দুপুরে ‘প্রার্থনার অনুপ্রেরণা ফাতেমা রাণী মা-মারিয়া; যে পরিবার একত্রে প্রার্থনা করে, সে পরিবার একত্রে বসবাস করে’ এই মূল সুরের উপর ভিত্তি করে ক্যাথলিক খ্রিস্টধর্মাবলম্বীদের দুদিনব্যাপী বার্ষিক তীর্থোৎসব শুরু হয়।

এই তীর্থ উৎসবে উদ্বোধনী খ্রিস্টযাগ উৎসর্গ করেন ঢাকা মহাধর্মপ্রদেশের সহকারী বিশপ সুব্রত বনিফাজ গোমেজ। বৃহস্পতিবার রাত ৮ টায় অনুষ্ঠিত হয় আলোক শোভাযাত্রা। এতে ত্রিশ হাজারের অধিক খ্রিস্টভক্ত মোমবাতি জ্বালিয়ে দুই কিলোমিটার পাহাড়ি ক্রুশের পথ অতিক্রম করেন। রাত ১০ টায় অনুষ্ঠিত হয় সাক্রামেন্তের আরাধনা ও সবশেষে অনুষ্ঠিত হয় নিশী জাগরণ। পরে শুক্রবার সকাল ৮ টায় অনুষ্ঠিত জীবন্ত ক্রুশের পথ ও সকাল ১০ টায় মহা খ্রিস্টযাগের মাধ্যমে দুই দিনব্যাপী তীর্থোৎসবের সমাপনী হয়। এ উৎসবে শেরপুরের পুলিশ সুপার মো. আমিনুল ইসলাম, ময়মনসিংহ ধর্মপ্রদেশের বিশপ পল পনেন কুবি সিএসসি, বারমারী ধর্মপল্লীর পাল পুরোহিত ফাদার তরুণ বনোয়ারী, সহকারী পাল পুরোহিত ফাদার নোবেল পাথাংসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে তীর্থ উৎসবকে ঘিরে নেওয়া হয় চার স্তরের নিরাপত্তা বেষ্টনী। পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ফায়ার সার্ভিস, আনসার ও গ্রাম পুলিশরা এতে নিরাপত্তা প্রদান করেন। তীর্থ উৎসব উপলক্ষে পাশের স্কুলমাঠে বসে এক বিরাট মেলা। এতে খ্রিস্টভক্ত ছাড়াও অন্যান্য সকল ধর্মের মানুষ কেনাকাটা করেন।

তীর্থোৎসবে আসা তীর্থযাত্রীরা জানান, ফাতেমা রানী মা মারিয়ার কাছে যে যা চান, তিনি তাদের তাই দেন। তার কাছে আসা ভক্তদের মনের আশা পূরণ করেন। এজন্য অনেকেই তাদের পরিবারের সাথে এসেছেন। অনেকে এসেছেন তাদের পরীক্ষা এবং শিক্ষাজীবনে ভালো ফলাফল করার জন্য। আবার অনেকেই এসেছেন পরিবারের সুখ-শান্তি কামনা করার জন্য।

প্রধান অতিথি ঢাকা মহাধর্মপ্রদেশের সহকারী বিশপ সুব্রত বনিফাজ গোমেজ বলেন, ঈশ্বরের আর্শিবাদ পাওয়ার জন্য খ্রিস্টভক্তরা এখানে প্রতিবছর দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসেন। এখানে এসে ঈশ্বরের অশেষ কৃপা প্রার্থনা করে মানসিক মুক্তি ও পারিবারিক শান্তি লাভ করেন। মা মারিয়া হলেন আমাদের শেষ আশ্রয়স্থল। তাই সবাই এখানে ছুটে আসেন সৃষ্টিকর্তার আর্শিবাদ কামনা করেন। এছাড়া বিশ্ব শান্তি কামনায় তীর্থ উৎসবে বিশেষ প্রার্থনা করা হয়েছে।

শেরপুরের পুলিশ সুপার মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, খ্রিস্টভক্তরা যাতে নির্বিঘ্নে তীর্থ উৎসব পালন করতে পারে সেজন্য তীর্থস্থানে চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। শান্তিপূর্ণভাবেই তীর্থ শেষ হয়েছে।

উল্লেখ্য, শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী বারোমারী এলাকায় ফাতেমা রাণীর তীর্থস্থানটি পর্তুগালের ফাতেমা নগরের আদলে ও অনুকরণে ১৯৪২ সালে স্থাপিত হয়। এরপর ১৯৯৮ সাল থেকে ফাতেমা রাণী মা মারিয়ার করুণা ও দয়া লাভের আশায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে তীর্থযাত্রীরা এখানে সমবেত হয় নিজেদের মনোবাসনা ও পাপ মোচনের জন্য।

 

 

 

 

 

এফ এম সিফাত হাসান, শেরপুর 

সম্পর্কিত নিউজ

চাঞ্চল্যকর বিশ্বমনি হত্যা রহস্য উন্মোচন

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার রাজঘাট ইউনিয়নের উদনাছড়া চা বাগানের মৃত লক্ষীন্দর দাসের মেয়ে বিশ্বমনি দাস (২৫) হত্যা রহস্য উদঘাটিত হয়েছে। এ ঘটনায় নিহতের প্রেমিক রনজিত সাঁওতালকে মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) রাতে গ্রেপ্তার…

আরও পড়ুন
শার্শার বেনাপোলে ভারত সীমান্তে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ পদযাত্রা

শার্শার বেনাপোল বলফিল্ড মাঠ থেকে পদযাত্রা করে চেকপোষ্ট গিয়ে সমাবেশ করে তারা। এ সময় বিজেপি নেতা শুভেন্দুর বিরুদ্ধে নানা ধরনের স্লোগান দেন ছাত্ররা। ভারত সীমান্ত অভিমুখে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের পদযাত্রা। বাংলাদেশের…

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো পড়ুন

জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি সহায়তা সংস্থাকে আরও ১৩ মিলিয়ন পাউন্ড দেবে ব্রিটেন

জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি সহায়তা সংস্থাকে আরও ১৩ মিলিয়ন পাউন্ড দেবে ব্রিটেন

২০৩৪ ফিফা বিশ্বকাপ: বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সৌদি আরব নির্বাচিত

২০৩৪ ফিফা বিশ্বকাপ: বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সৌদি আরব নির্বাচিত

চাঞ্চল্যকর বিশ্বমনি হত্যা রহস্য উন্মোচন

চাঞ্চল্যকর বিশ্বমনি হত্যা রহস্য উন্মোচন

শার্শার বেনাপোলে ভারত সীমান্তে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ পদযাত্রা

শার্শার বেনাপোলে ভারত সীমান্তে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ পদযাত্রা

কর্ণফুলীতে নোংরা পরিবেশে বেকারি পণ্য উৎপাদন-১০ হাজার টাকা জরিমানা

কর্ণফুলীতে নোংরা পরিবেশে বেকারি পণ্য উৎপাদন-১০ হাজার টাকা জরিমানা

সংখ্যাগুরু সংখ্যালঘু বলে জাতিকে বিভক্ত করা যাবে না: হাফেজ মু. রাশেদুল ইসলাম

সংখ্যাগুরু সংখ্যালঘু বলে জাতিকে বিভক্ত করা যাবে না: হাফেজ মু. রাশেদুল ইসলাম