মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের কৃষক মোহন রবিদাসের বাবা-মা চা শ্রমিক। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয় থেকে স্নাতকোত্তর করেছেন। গ্রামে গিয়ে শুরু করেছেন কৃষিকাজ। আদর্শ এ কৃষক এবার একসঙ্গে ১১ জাতের ধান চাষ করেছেন, যার অধিকাংশই বিদেশী। ফসলে রাসায়নিক প্রয়োগ করা হয়নি। তার পরও আশানুরূপ ফলন হয়েছে।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগর চা বাগানে প্রতিকূল পরিবেশে ধান চাষ করেছেন তিনি। তার পরও ফলন হয়েছে ভালো। এ ধান আমাদের এলাকায় একেবারে নতুন। ধান কাটার পর অনেকেই বীজ সংগ্রহ করার চিন্তা করছেন। এসব ধান চাষ আগে এ এলাকায় কেউ কখনো করেনি। ফলন কেমন হয় ধান কাটার পর বোঝা যাবে।
উপজেলার শমশেরনগর এলাকার কয়েকজন চাষী জানান, তারা মোহন রবিদাসের ধানখেত দেখেছেন। পর্যবেক্ষণ করছেন। তাতে মনে হচ্ছে ফলন ভালো হবে। বিভিন্ন রঙের এবং লম্বা ও চিকন বিভিন্ন আকারের ধান পাকতে শুরু করেছে। কিছুদিনের মধ্যেই কাটা হবে। সবচেয়ে বেশি ভালো ফলন হয়েছে ব্রি১০৩ হাইব্রিড ধানের। এটি নতুন জাতের ধান। বাজারে বিক্রিও হয় বেশি দামে। আগামী বছর এ জাতের ধান আবাদ করার আগ্রহ অধিকাংশ কৃষকের।
কৃষি উদ্যোক্তা মোহন রবিদাস জানান, প্রচলিত ধানের বাইরে গিয়ে বিদেশী জাতের ধান চাষের বিষয়টি তার মাথায় আসে। পরে তিনি বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন স্থান থেকে সব মিলিয়ে ১১ জাতের ধানবীজ সংগ্রহ করেন। কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগর ইউনিয়নের ক্যামেলিয়া গল্ফ মাঠের পাশে পতিত ৩০০ শতক জমিতে ধান চাষ করেছেন। পার্পেল রাইস, সুগন্ধি বাসমতি, ব্ল্যাক রাইস, সুগন্ধি কস্তুরি, রড (পাকিস্তানি), তুলসীমালা, ব্রি১০৩সহ ১১ জাতের বীজ রোপণ করেন চলতি আমন মৌসুমে। উঁচু জমি এ ধানগুলো চাষ করার জন্য খুব উপযোগী। কৃষকদের সুবিধার জন্য বীজগুলো বিক্রির চিন্তা করছেন তিনি, যাতে এসব জাতের ধানবীজ স্থানীয় কৃষকরা সহজে পেতে পারেন।
কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, ১১ জাতের ধান এলাকায় সাড়া ফেলেছে। মোহন রবিদাসের পরীক্ষামূলক এ চাষ স্থানীয় কৃষিতে নতুন কিছু যোগ করবে। এ জাতের ধান আবাদ ছড়িয়ে দিতে পারলে দেশে ধান উৎপাদন বাড়বে এবং ফলনে বৈচিত্র্য আসবে। দেশের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতে অবদান রাখবে।
এ ব্যাপারে কমলগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার রায় বলেন, ‘কৃষক মোহন রবিদাস ১১ জাতের ধানের সম্মিলন ঘটিয়েছেন। এ জাতের ধান এ উপজেলার জন্য বিরল। অনেকে হয়তো এমন চাষ কখনো দেখেননি। এখানে অনেক গবেষণার সুযোগ রয়েছে। এ জাতের ধান আবাদ ছড়িয়ে দিতে পারলে দেশে ধান উৎপাদনের পাশাপাশি খাদ্য ঘাটতি কমবে।
তিমির বনিক, মৌলভীবাজার