শেখ হাসিনা সরকারের সাবেক মন্ত্রী, এমপি এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের নামে ইস্যুকৃত লাল প্রাধিকারভুক্ত পাসপোর্ট বাতিল করেছে বাংলাদেশ সরকার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায়, ৫৮৯ জনের লাল পাসপোর্ট বাতিল করা হয়েছে এবং তাদের তথ্য ডাটাবেসে জব্দ করা হয়েছে। বাতিল পাসপোর্ট ব্যবহার করে তারা যাতে বাংলাদেশ ত্যাগ বা অন্য কোনো দেশে ভ্রমণ করতে না পারেন, সে লক্ষ্যে কঠোর নজরদারির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
লাল পাসপোর্ট বাতিলের ফলে সাবেক মন্ত্রী-এমপি ও তাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য বৈধ ভ্রমণ দলিল বা পাসপোর্ট ছাড়াই বিদেশ যাত্রা বা রাজনৈতিক আশ্রয় নেওয়ার পথ রুদ্ধ হয়ে পড়েছে। সরকারপতনের পরপরই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাবেক সরকারি কর্মকর্তা ও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত বিভিন্ন সংস্থার প্রধানদের পাসপোর্ট নবায়নেও কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।
লাল পাসপোর্ট বাতিলের নির্দেশ:
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ৩ সেপ্টেম্বর একটি নির্দেশনা জারি করে জানানো হয়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত হওয়ায় প্রাক্তন মন্ত্রী, এমপি, চিফ হুইপ, উপমন্ত্রীসহ ৫৮৯ জনের লাল পাসপোর্ট বাতিল করা হয়েছে। ২২ আগস্ট পাসপোর্ট অধিদপ্তরকে দেওয়া এই নির্দেশনা অনুযায়ী, এদের ভ্রমণ কার্যক্রমে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।
নজরদারি ও পাসপোর্টের তথ্য জব্দ:
সংশ্লিষ্টদের পাসপোর্ট বাতিলের পর তাদের সব ব্যক্তিগত তথ্যও জব্দ করা হয়েছে। এর ফলে তারা নতুন পাসপোর্ট পাওয়ার জন্য আবেদন করলেও তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রত্যাখ্যান হচ্ছে। পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সহযোগিতায় এমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে যাতে কোনো ধরনের অবৈধভাবে পাসপোর্ট নবায়নের সুযোগ না থাকে।
সাধারণ পাসপোর্টে আবেদন ও শর্ত:
লাল পাসপোর্টধারীরা যদি সাধারণ পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে চান, তবে তাদের দুটি গোয়েন্দা সংস্থার ছাড়পত্র প্রয়োজন হবে। এটি নিশ্চিত করা হয়েছে যাতে পেছনের দরজা দিয়ে বা দালাল চক্রের মাধ্যমে কেউ পাসপোর্ট পাওয়ার চেষ্টা করতে না পারে।
সরেজমিনে আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিস থেকে জানা যায়, আত্মগোপনে থাকা সাবেক মন্ত্রী-এমপিরা সরাসরি উপস্থিত না হলেও তাদের পরিবারের সদস্যদের সাধারণ পাসপোর্ট পাওয়ার চেষ্টা করছেন। এর পাশাপাশি পাসপোর্ট নবায়ন প্রক্রিয়া নিয়েও তদবির চলছে।
শেখ হাসিনা সরকারের সাবেক মন্ত্রী ও এমপিদের লাল পাসপোর্ট বাতিলের মাধ্যমে বিদেশ যাত্রার ক্ষেত্রে কঠোর নজরদারি আরোপ করা হয়েছে। এই পদক্ষেপের ফলে তাদের ভ্রমণ এবং রাজনৈতিক আশ্রয়ের পথ সংকুচিত হচ্ছে। সরকার এই প্রক্রিয়ায় অবৈধ পাসপোর্ট নবায়নের যে কোনো প্রচেষ্টা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে, যা ভবিষ্যতে দালাল চক্রের প্রতারণা রোধে সহায়ক হবে।