বন্যার পানি কমতে শুরু করলেও নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও রংপুরে তিস্তাপাড়ের মানুষের মধ্যে নদী ভাঙনের আতঙ্ক বেড়েছে। সারা রাত নির্ঘুম কাটাচ্ছেন অনেকে। পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের তৎপরতা বাড়ছে।
নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও রংপুরে বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হলেও নদী তীরবর্তী মানুষদের দুশ্চিন্তা কাটেনি। তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টসহ কয়েকটি জায়গায় পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে, তবে নদী ভাঙনের আশঙ্কা বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রশাসন ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম চালিয়ে গেলেও বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্যের সংকট এখনও রয়ে গেছে।
নীলফামারী প্রতিনিধি জানান, তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে বন্যার পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার নিম্নাঞ্চল থেকে পানি নামতে শুরু করেছে। তবে এখনও চরাঞ্চলের আমন খেত ও নিম্নাঞ্চলের পথঘাট তলিয়ে রয়েছে। কয়েক হাজার মানুষ এখনও পানিবন্দি, এবং দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির সংকট। ডিমলা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার মতে, ৩০ টন চাল ও ১৫৮০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণের কার্যক্রম চলছে।
কুড়িগ্রামের পরিস্থিতি আরও শোচনীয়। গত তিন দিনের বৃষ্টিতে ধরলা, ব্রহ্মপুত্র ও দুধকুমার নদীর পানি কিছুটা বেড়েছে, তবে বিপৎসীমা অতিক্রম করেনি। এর মধ্যে তিস্তার পানি কিছুটা কমলেও নদী ভাঙনের শঙ্কা জেগেছে। উলিপুর ও রাজারহাটের চরাঞ্চলের মানুষদের দুর্ভোগ বেড়েছে।
লালমনিরহাটেও বন্যার পানি ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে, তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। বানভাসি মানুষ ঘরে ফিরতে শুরু করেছে, কিন্তু ১৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এখনও পাঠদান বন্ধ রয়েছে। একই সঙ্গে ফসলি জমি, রাস্তাঘাট ও রেললাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
রংপুরের তিস্তাপাড়েও পানি কমলেও নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলের মানুষ এখনও দুর্ভোগে রয়েছেন। ধান, মরিচ ও বাদামের খেত বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কুড়িগ্রামে তিস্তা নদীর পানি কিছুটা কমলেও ভাঙনের ফলে উলিপুরের একটি স্কুল ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। লালমনিরহাটে বন্যার ফলে ৬ হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে, এবং রাস্তাঘাট চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। রংপুরে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় পানি দ্রুত কমছে, তবে ফসলের ক্ষতি বহাল রয়েছে।
পানি কমতে শুরু করলেও নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও রংপুরের মানুষ এখনও নদী ভাঙনের আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। প্রশাসন ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ত্রাণ বিতরণ ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তৎপর থাকলেও মানুষের দুর্ভোগ এখনো শেষ হয়নি।
অনলাইন ডেস্ক