আওয়ামী লীগ সরকারের গত ১৫ বছরেরও বেশি সময়ে বিদ্যুৎ খাতে ক্যাপাসিটি চার্জের নামে সরকারের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীদের পকেটে গেছে ১ লাখ ৬ হাজার কোটি টাকা। বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো অনুপযুক্তভাবে ব্যবহার করা এবং জরুরি আইন প্রণয়ন করে এসব লুটপাট সংঘটিত হয়েছে, যা বিদ্যুৎ খাতের খরচ বাড়িয়ে দিয়েছে এবং জনগণের ওপর চাপ সৃষ্ট করেছে।
ক্যাপাসিটি চার্জের অপব্যবহার:
২০০৯ সাল থেকে আওয়ামী লীগ সরকার বিনা টেন্ডারে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর অনুমোদন দিয়ে সরকারের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীদের বিশাল পরিমাণ অর্থ প্রদান করেছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে ৮০-৮৫ শতাংশ সক্ষমতায় বিদ্যুৎ উৎপাদনের অনুমোদন দেওয়া হলেও বাস্তবে তারা মাত্র ২৫-৩০ শতাংশ উৎপাদন করেছে। ফলস্বরূপ, প্রয়োজন না থাকলেও বছরের ৭০-৭৫ ভাগ সময় এই কেন্দ্রগুলো অলস ছিল, তবুও ক্যাপাসিটি চার্জের নামে টাকা তুলে নিয়েছে।
আইন প্রণয়ন ও চুক্তির মাধ্যমে লুটপাট:
২০১০ সালে ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন’ প্রণয়ন করে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর অনুমোদন দেওয়া হয়। পরবর্তীতে, ৭২টি রেন্টাল ও ইনডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার (আইপিপি) কেন্দ্রগুলোর অনুমোদন দেওয়া হয়। আইনের অধীনে বিনা টেন্ডারে এই অনুমোদন দেওয়া হয়, যেখানে সামিট গ্রুপ, ইউনাইটেড গ্রুপ এবং কনফিডেন্স গ্রুপসহ আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীরা উপকৃত হয়েছে।
সরকারি তহবিলের অপচয়:
২০০৮-০৯ অর্থবছর থেকে ২০১৭-১৮ অর্থবছর পর্যন্ত আইপিপি ও রেন্টাল কেন্দ্রগুলোর ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ দেওয়া হয় প্রায় ৪৩ হাজার কোটি টাকা। এর পরবর্তী পাঁচ বছরে, ২০১৮-১৯ থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত, এই খাতে খরচ হয় ৬৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। বিদ্যুৎ খাতের ভর্তুকির ৮১ শতাংশই ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধে ব্যয় হয়েছে।
বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ও প্রয়োজনীয়তা:
দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা বর্তমানে ২৬ হাজার ৫৭৮ মেগাওয়াট, কিন্তু স্বাভাবিক সময়ে এর মধ্যে মাত্র ১৩ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হয়। তাপমাত্রা বেড়ে গেলে এটি সর্বোচ্চ ১৬ হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত পৌঁছে। ফলে, প্রায় ১১ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতা অলস থাকে, যা উৎপাদন না করেও ক্যাপাসিটি চার্জ পেয়ে যায়।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের মতামত:
জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের মতে, বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোকে অলস বসিয়ে রেখে ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়া মানে সরকারের অর্থের অপচয়। পরিকল্পনা কমিশনের প্রতিবেদনেও স্বীকার করা হয়েছে যে, ক্যাপাসিটি চার্জ প্রদানের পদ্ধতি এক ধরনের ‘লুটেরা মডেল’ এবং তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত চুক্তির ফল।
গত ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে বিদ্যুৎ খাতের ক্যাপাসিটি চার্জের অপব্যবহারের ফলে জনগণের ওপর ব্যয় চাপানো হয়েছে। বিদ্যুৎ খাতে উৎপাদনের তুলনায় অতিরিক্ত কেন্দ্র গড়ে তোলা এবং সেগুলো অলস বসিয়ে রেখে অর্থনৈতিকভাবে দেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের অপব্যবহার থেকে রক্ষা পেতে বিদ্যুৎ খাতের নীতি ও চুক্তিগুলো পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন।
ডেস্ক রিপোর্ট: রিলাক্স নিউজ ২৪