মৌলভীবাজার শহরের আদালত সড়কের জজ কোর্টের ঠিক বিপরীতে প্রায় দেড় কোটি টাকা মূল্যের জমি অবৈধভাবে দখল করে আধাপাকা স্থাপনায় দেদারসে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন দখলদাররা। দীর্ঘদিন যাবৎ বেদখলে থাকা জেলা প্রশাসনের ভূমি থেকে অবৈধ স্থাপনা অপসারণ করতে আইনি নোটিশও দেওয়া হয়েছে। চলতি বছরের গত ১৫ই মে সাবেক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (রাজস্ব) স্বাক্ষরিত একটি স্মারকে দেওয়া নোটিশ, তাও অমান্য করে এখনো আধাপাকা স্থাপনায় ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন দখলদাররা। শহরের সবচেয়ে ব্যস্ততম সড়কের ওই জায়গা কয়েক যুগ যাবৎ বেদখলে থাকায় প্রতিনিয়ত যানজট লেগেই আছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, শহরের সবচেয়ে ব্যস্ততম এলাকার এ জমির মূল্য আকাশচুম্বী। তারা জানান, প্রতি শতক জমি সর্বনিম্ন ১৫ লাখ টাকা করে ও ধরা হলে ৯.৮৪ শতকের দাম পড়ে ১ কোটি ৪৭ লাখ ৬০ হাজার টাকা।
জেলা প্রশাসন সূত্রের বরাতে জানা যায়, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও মৌলভীবাজার সদর উপজেলা ভূমি অফিসের দুটি স্মারকের মূলে প্রেরিত প্রতিবেদন অনুযায়ী মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক নিশ্চিত হয়েছেন যে, মৌলভীবাজার সদর উপজেলাধীন ১০৫ নং জেএলস্থিত মৌলভীবাজার মিউনিসিপ্যালিটি মৌজার ৭৮২৩, ৭৮২৪, ৬৮২৫, ৭৮২৬, ৭৮২৭, ৭৮২৮, ৭৮২৯, ৭৮৩০, ৭৮৩১, ৭৮৩২, ৭৮৩৩, ৭৮৩৪, ৭৮৩৫, ৭৮৩৬ এই ১৪ দাগের ৯.৮৪ শতক ভূমি দখল করে অবৈধভাবে স্থাপনা নির্মাণ করেছেন ১৮জন ব্যক্তি। সংশ্লিষ্ট কার্যালয় সূত্রের বরাতে আরও জানায়, সরকার ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষের ভূমি ও ইমারত (দখল ও পুনরুদ্ধার) অধ্যাদেশ ১৯৭০ এর ৫ (১) ধারা এবং তৎসহ পিও ৮৫/৭২ অনুযায়ী নোটিশ প্রাপ্তির ৩০ দিনের মধ্যে এই তফসিল বর্ণিত ভূমি হতে স্থাপনা অপসারণপূর্বক অবৈধ দখল ত্যাগ করার জন্য অবৈধ দখলদারদের অনুরোধ করা হয়। ১৫ই মে সাবেক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোঃ আব্দুল হক স্বাক্ষরিত একটি স্মারকে তিনি উল্লেখ করেন, উল্লেখিত সময়ের মধ্যে যদি আপনার বর্ণিত ভূমির অবৈধ দখল ত্যাগ এবং স্থাপনা অপসারণ করতে সক্ষম না হন তবে, জেলা প্রশাসক মৌলভীবাজার কর্তৃক নিয়োজিত এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট’র উপস্থিতিতে ভূমি হতে দখলকারীদের উচ্ছেদক্রমে তা সকারের খাস দখলে আনা হবে।
অবৈধ দখল অপসারণের নোটিশ প্রাপ্তরা হলেন, তোফাজ্জল হোসেন মনির, আলাল মিয়া, মফিজ মিয়া, মুজিবুল হক, মো. ইসমাইল হোসেন, চন্দন মালাকার, রাজু মালাকার, মো ময়নুল ইসলাম, রহমান আহমদ, রকিব হোসেন, দুলন বৈদ্য, সৈয়দ ফারুক আহমদ, আরিফুর রহমান তুহিন, আজম রহমান, হাবিবুর রহমান, মানিক মিয়া, মো জিতু মিয়া ও শিবু চন্দ। নোটিশ প্রদানের প্রায় ৫ মাস অতিবাহিত হলেও সড়কে যত্রতত্র যানজট লাগিয়ে দখলদারগণ ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।
গত রোববার (১০ই নভেম্বর) জেলার আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ অবৈধ স্থাপনাগুলো দ্রুত অপসারণ করতে জেলা প্রশাসককে অনুরোধ জানানো হয়। এদিকে, দখল ছেড়ে কেন যাচ্ছেন না এমনটা জানতে চাইলে অত্র দাগের রাকিব স্টোর’র সত্বাধিকারী মোঃ ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘এই ভূমি আমার অনেক আগের কাগজ করা। বহু আগে বিনিময়ের মাধ্যমে পেয়েছি।’ তিনি বলেন, এখানকার ৫টি কক্ষের ভুমি নিয়ে আদালতে মামলা রয়েছে। অপর দখলদার সমুজ আলীর ছেলে মোঃ ময়নুল ইসলাম বলেন, জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে অপসারণের নোটিশ পাবার পর আদালতে আমরা মামলা দায়ের করেছি।
মৌলভীবাজার সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সানজিদা আক্তার বলেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) দখলদারদের উচ্ছেদ নোটিশ দিয়েছিলেন। নোটিশে লেখা আছে, যদি তারা না যায়, তবে আমাদের জেলা প্রশাসনে প্রতিবেদন দেবার জন্য। পরে দেখলাম, তারা চলে যায়নি। আমরা প্রতিবেদন পাঠিয়ে দিয়েছি। এখন পরবর্তী পদক্ষেপ জেলা প্রশাসন কার্যালয় থেকে নেয়া হবে। মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) শাহীনা আক্তার অপসারণের নোটিশের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, এই নোটিশের বিপরীতে কোন মামলা আছে কিনা,তা দেখে জানাতে পারবো।
তিমির বনিক, মৌলভীবাজার