মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার রাজঘাট ইউনিয়নের উদনাছড়া চা বাগানের মৃত লক্ষীন্দর দাসের মেয়ে বিশ্বমনি দাস (২৫) হত্যা রহস্য উদঘাটিত হয়েছে। এ ঘটনায় নিহতের প্রেমিক রনজিত সাঁওতালকে মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) রাতে গ্রেপ্তার করেছে শ্রীমঙ্গল থানা পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রনজিৎ সাঁওতাল আলোচিত এ ঘটনার জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। বুধবার(১১ই ডিসেম্বর) তাকে মৌলভীবাজার বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ ও নিহতের পারিবারিক সূত্রের বরাতে জানা যায়, উপজেলার রাজঘাট ইউনিয়নের উদনাছড়া চা-বাগানের বাসিন্দা বিশ্বমনি দাসের সাথে একই বাগানের শ্রমিক রনজিৎ সাঁওতালের ছয় মাসের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তারা একাধিকবার দৈহিক সম্পর্কে লিপ্ত হন। এ অবস্থায় নিহত বিশ্বমনি দাস অন্তঃসত্তা হয়ে পরেন এবং বিয়ের জন্য প্রেমিক রনজিৎ সাঁওতালকে চাপ প্রয়োগ করেন। কিন্তু রনজিৎ বিয়ে করতে রাজি না হয়ে বিশ্বমনিকে তার গর্ভের সন্তান নষ্ট করতে বলেন। এতে বিশ্বমনি রাজি হননি।
গত ৫ই ডিসেম্বর সকালে নিহত বিশ্বমনি দাস বাগানের অন্যান্যদের সাথে শ্রমিককের কাজ করতে নিরালা পান পুঞ্জিতে যান। বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে তার সহকর্মীসহ নিরালা পান পুঞ্জির কাজ শেষে রওয়ানা হয়ে বিকেল আনুমানিক সাড়ে চারটার দিকে উদনাছড়া চা বাগানের ১১ নম্বর ভাঙ্গা ব্রিজের কাছাকাছি পৌঁছলে দেখতে পান তার প্রেমিক রনজিৎ সাঁওতাল সেখানে অপেক্ষা করছেন। বিশ্বমনি তার প্রেমিককে দেখতে পেয়ে সহকর্মীদের জানান তিনি টয়লেটে যাবেন, তারা যেন চলে যান। কিন্তু ওইদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত বিশ্বমনি বাড়িতে না আসার তার স্বজনরা তাকে খোঁজাখুজি শুরু করেন।
খোঁজাখুজি চলাবস্থায় গত ৭ই ডিসেম্বর সকাল অনুমান ৯টার সময় নিহতের ভাইসহ শ্রমিকরা উদনাছড়া চা বাগানের ১১ নম্বর সেকশনের ভিতরে একটি কড়ই গাছের নিচে বিশ্বমনির মৃতদেহ গলায় তার পড়নের ওড়না দিয়া বাধাবস্থায় দেখতে পান। পরে খবর পেয়ে শ্রীমঙ্গল থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে মৃতদেহের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করে মরদেহ ময়না তদন্তের জন্য ২৫০শয্যা বিশিষ্ট মৌলভীবাজার সদর জেনারেল হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে। ওইদিনই (৭ই ডিসেম্বর) নিহতের ছোটভাই বাদি হয়ে শ্রীমঙ্গল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
শ্রীমঙ্গল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘চাঞ্চল্যকর এ হত্যা ঘটনার রহস্য উদঘাটনে মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার এম. কে. এইচ. জাহাঙ্গীর হোসেন মহোদয়ের দিক নির্দেশনায় শ্রীমঙ্গল থানার একটি চৌকস দল তদন্ত কাজ শুরু করে। তদন্তের এক পর্যায়ে মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) উদনাছড়া চা বাগানের ৮ নম্বর বস্তির বাসিন্দা শংকর সাঁওতালের ছেলে রনজিত সাঁওতালকে (২১) আলোচিত এ হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার সন্দেহে আটক করে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে।
পুলিশী জিজ্ঞাসাবাদে রনজিত সাঁওতাল জানায় গত ছয় মাস যাবত নিহত বিশ্বমনির সাথে তার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। নিহতের সাথে ইতিপূর্বে একাধিকবার তার শারীরিক সম্পর্ক হয়। এতে নিহত বিশ্বমনি অন্তঃসত্তা হয়ে পড়ে এবং বিয়ের জন্য চাপ দিতে থাকে। কিন্তু রনজিত বিয়েতে রাজি না হয়ে বিশ্বমনিকে গর্ভের সন্তান নষ্ট করার ঔষধ কিনে দেয়। গত ৫ ডিসেম্বর উদনাছড়া চা বাগানের ১১ নম্বর সেকশনে বিকাল অনুমান সাড়ে চার ঘটিকার সময় আসামি রনজিত সাঁওতাল ভাঙ্গা ব্রিজের পাশে রাস্তায় বিশ্বমনির জন্য অপেক্ষা করছিল। বিশ্বমনি দাস নিরালা পান পুঞ্জির কাজ থেকে বাড়িতে ফেরার পথে রনজিত সাঁওতালকে দেখে সহকর্মীদের জানায় টয়লেটে যাবে, তারা যেন চলে যান। এ অবস্থায় সহকর্মীরা বাগানের চলে গেলে বিশ্বমনি তার প্রেমিক রনজিতের সাথে দেখা করে জানায় তাকে বিয়ে না করলে বিষপানে আত্মহত্যা করবে। কিন্তু আসামি রনজিত বিয়ে করতে রাজি না হয়ে চলে যেতে চাইলে নিহত বিশ্বমনি তার সাথে থাকা বিষপান করে বিষক্রিয়ায় ছটফট করতে থাকে। এ অবস্থায় ওই স্থান দিয়ে এক ব্যক্তিকে বাইসাইকেলে আসতে দেখে আসামি রনজিত তার অন্তঃসত্তা প্রেমিকা বিশ্বমনিকে তার গায়ের উড়না গলায় পেঁচিয়ে মুমুর্ষু অবস্থায় টানতে টানতে চা বাগানের ভিতর নিয়ে যায়। বিশ্বমনি দাসের নড়াচড়া বন্ধ হয়ে গেলে রনজিত সাঁওতাল তার গলার সাথে গিট দেওয়া উড়নার অপর অংশ চারা গাছের গোড়ার সাথে বেঁধে রেখে নিজ বাড়িতে চলে যায়। পরে ১০ ডিসেম্বর তাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে সে পুলিশের কাছে ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে।
তিমির বনিক, মৌলভীবাজার