বন্যার পানি স্থায়ীত্বতে জনজীবন বিপর্যস্ত হাওর পাড়ের মানুষের

মৌলভীবাজারের বড়লেখার তালিমপুর ইউনিয়নের হাকালুকি হাওরপারের বন্যাদুর্গত মানুষের চরম দূর্ভোগে দিনাতিপাত নির্বাহ করছে। কারণ বন্যা পরিস্থিতি যত দীর্ঘায়িত হচ্ছে, ততো তাদের দুর্ভোগ বাড়ছে।

এলাকাবাসীর বরাতে তালিমপুর ইউনিয়নের বন্যা কবলিত কয়েকটা এলাকার পরিস্থিতিতে দেখা গেছে, অনেকের বাড়িঘর এখনও পানিতে ডুবে আছে। কারও ঘরের চারপাশের মাটি সরে গেছে। কারও ঘর কোন রকম সাড় দাঁড়িয়ে আছে। কেউ কেউ আফালের সাথে লড়াই করে ঘর বাঁচানোর চেষ্টা করছেন। পশ্চিম গগড়া গ্রামের হাবিবুর রহমান বলেন, ঘরের চারদিকে পানি। কষ্ট করে ঘরে আছি। আশ্রয় কেন্দ্রে যাইনি। আশ্রয় কেন্দ্রে গেলে ঘর আফালে ভেঙে যাবে। তাই ঝুঁকি নিয়ে আফালের সাথে লড়াই করে টিকে থাকার চেষ্টা করছেন। এলাকার মানুষজন জানান, বন্যা পরিস্থিতি যত দীর্ঘায়ীত হচ্ছে, তাদের দুর্ভোগ তত বাড়ছে। তারা অনেক কষ্ট করে দিনযাপন করছেন। তারা কীভাবে সংসার চালাবেন। কীভাবে ঘর-দোয়ার মেরামত করবেন-এসব চিন্তা তাদের ঘিরে ধরেছে।

জানা গেছে, গত ১৬ জুন থেকে থেকে বড়লেখায় ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে উপজেলার দশটি ইউনিয়নের ২৫২টি গ্রাম প্লাবিত হয়। বন্যার পানিতে বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, ফসলের মাঠ তলিয়ে যায়। এতে প্রায় লাখো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েন। ঘরে টিকতে না পেরে অনেকে আশ্রয় কেন্দ্রে ছুটে যান। কেউ আবার আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়ে ওঠেন। এছাড়া বিভিন্ন এলাকার গ্রামীণ রাস্তা পানিতে নিমজ্জিত থাকায় যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন বানভাসি মানুষ। এরপর কয়েকদিন ভারী বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে ঢল না নামায় বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হচ্ছিল। কিন্তু চলতি মাসের ১ জুলাই থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ায় বন্যা পরিস্থিতি আবারও অবনতি হয়। বিশেষ করে উপজেলার তালিমপুর, বর্ণি, দাসেরবাজার, সুজানগর ও বড়লেখা সদর ইউনিয়নের বন্যাকবলিত হাওর পাড়ের মানুষের ভোগান্তি দিন দিন বাড়ছে।
উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছে, উপজেলায় প্রথম দফায় বন্যায় ৩৩টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছিল। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ৫’শ পরিবার আশ্রয় নেয়। পানি কিছুটা কমায় চারটি আশ্রয় কেন্দ্রে ছেড়ে কয়েকটি পরিবার বাড়িতে ফিরে গেছে। বর্তমানে ২৯টি আশ্রয় কেন্দ্রে প্রায় সাড়ে ৪’শ পরিবার রয়েছে। এদিকে বন্যা কবলিত এলাকায় প্রশাসনের পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যক্তি-সংগঠনের পক্ষ থেকে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। যদিও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল বলে জানিয়েছেন বন্যাদুর্গতরা।

বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রয়েছে জানিয়ে বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজরাতুন নাঈম বলেন, বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণের পাশপাশি বিশুদ্ধ পানি ও খাবার স্যালাইন বিতরণ করা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক বন্যা কবলিত এলাকার মানুষের খোঁজখবর রাখা হচ্ছে। যে কোন রকম পরিস্থিতির মোকাবেলায সার্বক্ষণিক প্রস্তুত।

 

তিমির বনিক, মৌলভীবাজার প্রতিনিধি

সম্পর্কিত নিউজ

ছাত্র আন্দোলনে শহীদদের স্মরণসভায় অমন্ত্রন না পেয়ে বিএনপি নেতাদের ক্ষোভ, রোষানলে ইউএনও

পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় উপজেলা প্রশাসন কতৃক আয়োজিত শহীদদের স্মরণসভায় বিএনপির স্থানীয় নেতাদের আমন্ত্রণ না করায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে কৈফিয়ত চাইতে গিয়েছিলেন কয়েকজন নেতা। তখন ইউএনও ও বিএনপির নেতাদের কথোপকথনের একটি…

আরও পড়ুন
অবশেষে খাসি সম্প্রদায়ের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান প্রশাসনের সহায়তায় হচ্ছে

খাসি সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী বার্ষিকী উৎসব খাসি “সেং কুটস্নেম”(বর্ষবিদায়- বর্ষ বরণ অনুষ্ঠানটি অবশেষে প্রশাসনের সহায়তায় পালিত হচ্ছে। পূর্ব প্রস্তুতীর অংশ হিসেবে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে আগামী ২৩শে নভেম্বর মাগুরছড়া খাসি(খাসিয়া) পুঞ্জির খেলার মাঠে…

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো পড়ুন

ছাত্র আন্দোলনে শহীদদের স্মরণসভায় অমন্ত্রন না পেয়ে বিএনপি নেতাদের ক্ষোভ, রোষানলে ইউএনও

ছাত্র আন্দোলনে শহীদদের স্মরণসভায় অমন্ত্রন না পেয়ে বিএনপি নেতাদের ক্ষোভ, রোষানলে ইউএনও

মৌলভীবাজারের সন্তানের স্বপ্ন পূরণ হলো না! বেলারুশ সীমান্তে পিটিয়ে হত্যা

মৌলভীবাজারের সন্তানের স্বপ্ন পূরণ হলো না! বেলারুশ সীমান্তে পিটিয়ে হত্যা

অবশেষে খাসি সম্প্রদায়ের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান প্রশাসনের সহায়তায় হচ্ছে

অবশেষে খাসি সম্প্রদায়ের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান প্রশাসনের সহায়তায় হচ্ছে

ব্যারিস্টার সুমনকে হবিগঞ্জ কারাগারে স্থানান্তর

ব্যারিস্টার সুমনকে হবিগঞ্জ কারাগারে স্থানান্তর

মৌলভীবাজার পূজা উদযাপন পরিষদের সম্পাদক মহিম গ্রেপ্তার

মৌলভীবাজার পূজা উদযাপন পরিষদের সম্পাদক মহিম গ্রেপ্তার

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় র‍্যাব-৯ এর অভিযানে ৫৪ কেজি গাঁজা উদ্ধার, মাদক ব্যবসায়ী আটক

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় র‍্যাব-৯ এর অভিযানে ৫৪ কেজি গাঁজা উদ্ধার, মাদক ব্যবসায়ী আটক