বেনাপোল চেকপোস্ট আন্তর্জাতিক প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল এলাকা থেকে ৮ জন পাসপোর্টধারী যাত্রীর কাছ থেকে প্রায় দুই লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। তবে চেকপোস্ট মহাসড়কের পাশে একটি মার্কেটের গলি থেকে দুইজনের ১৩ হাজার টাকা উদ্ধার করে দিয়েছেন স্থানীয় বিজিবি, বন্দর ও বাজার কমিটি। বাকি ব্যক্তিদের খোয়া যাওয়া টাকা নিয়ে ছিনতাইকারী লাপাত্তা হওয়ায় উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
জানা যায়, ভারত গমনের প্রধান ফটক বেনাপোল চেকপোস্ট। এই পথে প্রতিদিন ৫ থেকে ৭ হাজার দেশ-বিদেশি পাসপোর্টধারী যাতায়াত করে থাকে। সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) ভোরে বাস থেকে নামার পর বন্দরের বাসটার্মিনাল ও প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল থেকে পাসপোর্ট ফরম ও ভ্রমণ কর কেটে দেওয়ার কথা বলে চিহ্নিত ছিনতাইকারীরা তাদের বিভিন্ন গলিতে বসিয়ে কখনো ভয়-ভীতি আবার কখনো টাকার নম্বর এন্ট্রির কথা বলে বড় অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সামনে এসব ঘটনা ঘটলেও সখ্যতার কারণে তারা এড়িয়ে চলেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, আন্তর্জাতিক প্যাসেঞ্জার টার্মিনালের আশেপাশে একাধিক জায়গায় ঘাপটি মেরে বসে থাকে দালাল পরিচয়ের ছিনতাই চক্র। পরে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা পাসপোর্ট যাত্রীদের টার্গেট করে। এরপর তাদেরকে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার কথা বলে তারা বিভিন্ন মার্কেটের গলিতে নিয়ে বিভিন্ন কৌশলে টাকা ছিনতাই করছে। এসব ছিনতাইকারীদের ভয়ে স্থানীয়রা কেউ প্রতিবাদ করতে পারে না। কারণ এরা দলে অনেক ভারী। আর এসব চক্রগুলোর নানাভাবে সহযোগিতা করে নামধারী কিছু সাংবাদিক, রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকা লোকজন ও অসাধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
ছিনতাইকারীর কবলে পড়া খুলনার বটিয়া ঘাটার সাগর হোসেন বলেন, সকালে ভারতে গমনের উদ্দেশ্যে প্যাসেঞ্জার টার্মিনালের সামনে লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। সেখানে কয়েকজন লোক তাকে বলে অনলাইনে ভ্রমণ ট্যাক্স জমা দিলে তারা বন্দরের লম্বা লাইনের আগে ইমিগ্রেশন এ পৌঁছে দিবে। পরে তাকে পাশেই একটি মার্কেটের গলিতে কম্পিউটারের দোকানে বসায়। সেখানে ট্যাক্স জমা দেওয়ার পর টাকার নাম্বার লিখতে হবে জানিয়ে ওই ঘরের পাশের রুমে বসায় ছিনতাইকারীরা। এক পর্যায়ে সাথে থাকা ৫২ হাজার টাকা নিয়ে আবার ফেরত দেয়। পরে সন্দেহ হলে গুনে দেখেন সেখান থেকে ২৩ হাজার টাকা সরিয়ে ফেলেছে। পরে বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দিলে বন্দর ও বিজিবি সদস্যের সহযোগিতায় ৭ হাজার টাকা ছিনতাইকারীদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়। এসব প্রতিষ্ঠানে পাশেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘোরা ফেরা করলেও তারা কিছুই দেখে না।
এ বিষয়ে বেনাপোল বন্দরের উপ-পরিচালক সজিব নাজির জানান, পাসপোর্টধারীদের টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা দুঃখজনক। মাঝে-মধ্যেই টাকা উদ্ধার করে দেওয়া হয় যাত্রীদের। বন্দর এলাকায় ওদের বিরুদ্ধে আরও কড়াকড়ি আরোপ করা হবে। বেনাপোল পোর্টথানা পুলিশের ওসি সুমন ভক্ত জানান, তারা বহুবার ছিনতাইকারীদের প্রতিষ্ঠান বন্ধ করেছেন এবং আটক করেছেন। তবে তারা জেল থেকে ফিরে এসে আবারও এসব অপরাধ করছে। ছিনতাই পুরোপুরি বন্ধ করতে হলে পুলিশকে স্থানীয় ব্যবসায়ী, সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদদের সহযোগিতা থাকতে হবে।
মোঃ ইমরান হোসেন হৃদয়, শার্শা, যশোর, প্রতিনিধি