পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় উপজেলা প্রশাসন কতৃক আয়োজিত শহীদদের স্মরণসভায় বিএনপির স্থানীয় নেতাদের আমন্ত্রণ না করায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে কৈফিয়ত চাইতে গিয়েছিলেন কয়েকজন নেতা। তখন ইউএনও ও বিএনপির নেতাদের কথোপকথনের একটি অডিও (মঙ্গলবার ১৯নভেম্বর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।মঠবাড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল কাইয়ুম ও বিএনপির সংশ্লিষ্ট নেতা ইউএনওর কার্যালয়ে যাওয়ার কথা নিশ্চিত করেছেন।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়,গত সোমবার সকালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের স্মরণে ইউএনওর সভাকক্ষে একটি সভার আয়োজন করে উপজেলা প্রশাসন। সভায় শহীদ পরিবারের স্বজন, শিক্ষার্থী, গণ্যমান্য ব্যক্তি ও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানরা এবং গণমাধ্যম কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। এতে বিএনপির নেতাদের আমন্ত্রণ না করায় দলটির স্থানীয় নেতারা ক্ষুব্ধ হন।
দলীয় সূত্র জানা যায় , ওই ঘটনার প্রতিবাদে মিছিল নিয়ে ইউএনওর কার্যালয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন দলটির নেতা-কর্মীরা। কিন্তু জ্যেষ্ঠ নেতাদের হস্তক্ষেপে সেটি বন্ধ হয়। পরে সোমবার সন্ধ্যায় মঠবাড়িয়া পৌর বিএনপির আহ্বায়ক কে এম হুমায়ুন কবিরের নেতৃত্বে কয়েকজন নেতা ইউএনওর কার্যালয়ে যান। তাঁরা ইউএনও আবদুল কাইয়ূমের কাছে উপজেলা প্রশাসনের সভায় তাঁদের নিমন্ত্রণ না করা ও আওয়ামী লীগের নেতাদের সভায় উপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। ওই সময়ের কথোপকথনের ৩ মিনিট ৪০ সেকেন্ডের একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
ওই অডিওতে ক্লিপে বিএনপি নেতাকর্মীদের এবং কে এম বিএনপির নেতা হুমায়ুন কবিরকে ইউএনওর উদ্দেশে বলতে শোনা যায়, ‘আমার কি বয়স কম, আমার বয়স ৫৪ চলে। আমি স্টুডেন্ট পলিটিকস করছি ৯৬ সাল থেকে…। আমি একটা কাগজ পাঠাইছি, সে (অফিস সহায়ক) আমার লোকরে আইন দেখায়। এরা আওয়ামী লীগ করে। আওয়ামী লীগ আমাদের হেডেক না, প্রশাসনের হেডেক ও গভর্নমেন্টের হেডেক। গভর্নমেন্টের টার্গেট চাইর বছর থাকবে। আওয়ামী লীগ থাকলে তো হ্যারা থাকতে পারবে না।’এ সময় পাশ থেকে বিএনপির আরেক নেতাকে বলতে শোনা যায়, ‘গত কয়েক বছরে এই ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার যেভাবে প্রশাসন সাজিয়েছে, তাতে কেয়ারটেকার সরকার হিমশিম খাইতেছে।’ হুমায়ুন কবির আবার ইউএনওর উদ্দেশে বলেন, ‘আপনি জানেন না, আমি যেবার ইলেকশনে দাঁড়াইছি, পৌরসভায় ভোটে আমি হইয়া গেছি। যারা ভোট দেতে পারবে না, হ্যারাও আমারে ভোট দেতে আইছে কিন্তু কোনো লাভ নাই…। আগামী নির্বাচনে অগো (আওয়ামী লীগ) ভোট লাগবে না। আমাগো যে ভোট আছে, হেইয়াই তো লাগবে না। মাইনষে অগো ভোট দেবে নাহি। দেবে আমাগো, নাইলে জামাতরে। জামাত যদি অইয়া যাইতে পারে, আমাগো আপত্তি নাই।’‘এখন কথা অইলো জাতীয় যত প্রোগ্রাম হইবে, সেইখানে আমাদের প্রতিনিধিত্ব কীভাবে এনশিওর (নিশ্চিত) করবেন, সেটা আপনাকে করতে হবে। না করলে…আমরা কিন্তু আপনাকে বিব্রত করতে আসি নাই। আমরা আমাদের দাবিদাওয়া নিয়ে আসছি। আমরা নিজেরাই বিব্রত।’
অডিও ক্লিপটিতে ইউএনও আবদুল কাইয়ূমকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি তো এখানে কাউকে ডেকে আনিনি। এখন এখানে যদি কেউ আসে, আমি কি বলব আপনি যান।’ ইউএনওর কথার প্রত্যুত্তরে বিএনপি নেতাদের একজনকে বলতে শোনা যায়, ‘আপনি বলবেন, এইভাবে বলবেন, আপনার এখানে কী কাজ বলেন।’
বিএনপি নেতা হুমায়ুন কবির গণমাধ্যম কর্মীদের জানান,প্রথম আলো সহ বিভিন্ন অনলাইন মিডিয়াগুলোয় যেভাবে প্রচার হয়েছে আসলে ব্যাপারটা সেরকমের নয়।মঠবাড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বক্তব্যেই তার স্পষ্টতা পাওয়া যায়।৫ ই আগস্ট ছাত্র আন্দোলনের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বৈরাচারী সরকার হাত থেকে মুক্তি পায়।তাদের ত্যাগের বিনিময়ে আমরা স্বৈরাচারীর হাত থেকে মুক্তি হতে পেরেছি।জুলাই -আগস্টের ছাত্র আন্দোলনে আহত এবং শহীদদের স্মরণে স্মরণসভা ও দোয়া অনুষ্ঠিানে কোন আওয়ামীলীগ ফ্যাসিস্ট সরকারের দালালদের উপস্থিতি আমরা সহ মঠবাড়িয়া উপজেলার আপামর জনগণ ভিন্নচোখেই দেখবে।তাঁদের নিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠান করেন উপজেলা প্রশাসন। এতে বিএনপির নেতা-কর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়ে মিছিল করতে চেয়েছিলেন। তিনি করতে দেননি। পরে সন্ধ্যায় উপজেলা ও পৌর বিএনপির নেতারা ইউএনওর সঙ্গে কথা বলতে তাঁর কার্যালয়ে গিয়েছিলেন। এর বেশ কিছু নয়।বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি আধুনিক বাংলাদেশ বিনির্মাণে ঐক্যবদ্ধ।তারি ধারাবাহিকতায় মঠবাড়িয়া উপজেলা ও পৌর বিএনপি উপজেলা প্রশাসনের সর্বদা পাশে থাকবো এবং আছি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল কাইয়ূম গণমাধ্যম কর্মীদের জানান তাঁরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন আবদার নিয়ে আসছেন। সোমবার ছাত্রদের নিয়ে একটি অনুষ্ঠান ছিল। সেখানে তাঁদের দাওয়াত দেওয়া হয়নি, এ জন্য সন্ধ্যার পর তাঁরা তাঁর কার্যালয়ে এসেছিলেন। তিনি তাঁদের বলেছেন, রাজনৈতিক নেতাদের এ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ করার নির্দেশনা ছিল না, তাই করা হয়নি। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাঁরা এ ধরনের সমস্যায় পড়ছেন বলে তিনি জানান।আমরা বর্তমানে এ ধরনের পরিস্থিতির জন্য অভ্যস্ত হয়ে গেছি। সরকারি নির্দেশনার বাইরে তো আর কিছু করা যায় না। তবে এ অডিও কীভাবে ভাইরাল হলো তা আমি ঠিক বলতে পারছি না।
তানভীর,পিরোজপুর (মঠবাড়িয়া) সংবাদদাতা