শুধুমাত্র কৃষি ইন্সটিটিউট এর জন্য বালু সরবরাহ করার কথা থাকলেও সরকারী নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে একটি প্রতিষ্ঠান। সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার অন্তর্ভুক্ত পাইলগাও ইউনিয়নের কাতিয়া লঞ্চ ঘাট এলাকা থেকে অবৈধভাবে বালু মাটি উত্তোলন করছে একতা এন্টার প্রাইজ নামধারী একটি চক্র। ভাঙ্গা বাড়ী, ফেচির বাজার, কশবা বাজার ও শেরপুর বাজার সহ বিভিন্ন স্থানে অবৈধভাবে বালু বিক্রির রমরমা বাণিজ্য করে আসছে ঐ চক্রটি। এছাড়াও এসব এলাকার বিভিন্ন স্থানে স্তুপ করে রাখা বালু বিক্রি করে আসছে তারা।
অন্যদিকে, একটি মেশিন দিয়ে নির্দিষ্ট স্থান থেকে বালু উত্তোলন করার কথা থাকলেও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি সেই নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে নদীর তীরবর্তী ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে ৩ থেকে ৪টি ড্রেজার মেশিন দিয়ে অনবরত বালু উত্তোলন করেই আসছে।
ঐ সকল এলাকায় খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, বালু উত্তোলন করার কথা যেভাবে ছিল, সেভাবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান একতা এন্টার প্রাইজ বালু উত্তোলন করছেনা! উপজেলার পাইলগাঁও ইউনিয়নের কাতিয়া লঞ্চঘাট এলাকা থেকে গেল কয়েক মাস যাবৎ উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ৩ থেকে ৪টি ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে মাটি-বালু উত্তোলন করে আসছে প্রভাবশালী এই চক্র।
চক্রটি প্রথমে নদীর মধ্যবর্তী স্থানে বসানো ড্রেজার মেশিন দিয়ে একটি বড় স্টিলের নৌকা বোঝাই করে বালু ও মাটি দিয়ে। পরে, তা অন্যত্র সরিয়ে ফের একইভাবে তোলা হয় বালু মাটি। এভাবে প্রতিদিনই লক্ষ কোটি ঘনফুট বালু-মাটি উত্তোলন করে আসছে তারা।
এ ব্যাপারে স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, এসব বালু উত্তোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছে বিগত সৈরাচারী সরকারের কিছু প্রভাবশালী নেতা। এলাকাবাসী আরো জানান, বালু উত্তোলন করার জন্য সরকার কর্তৃক নির্দিষ্ট সময় ও স্থান নির্ধারণ করে দেয়া হলেও ক্ষমতাশালী এই সিন্ডিকেটটি এসবের তোয়াক্কা না করে একই স্থান থেকে ৩/৪টি ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করেই যাচ্ছে। যার ফলে, প্রতিদিনই এই এলাকার রাস্তা- ঘাট, স্কুল, মাদ্রাসা, মসজিদ, কলেজ, ফসলি জমি, বাড়ী-ঘর সহ বিভিন্ন স্থাপনা নদী ভাঙ্গনের শিকার হচ্ছে।
তারা আরো বলেন, নদীতে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ড্রেজার মেশিন বসিয়ে মাটি বালু উত্তোলন করা হয়। যা নদীর তলদেশ থেকে শুরু করে আশপাশের এলাকায় বিশালশ আকারের গর্তের সৃষ্টি করে। এতে, যেকোনো সময় ঐ সকল এলাকার পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।
এদিকে, অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ঘটনা বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক, স্থানীয় ও অনলাইন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলেও টনক নড়েনি নির্দিষ্ট মহলের! এ ব্যাপারে গত ২৯ মে ২০২৪ ইংরেজি তারিখে জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন এলাকাবাসী।
উক্ত অভিযোগে তারা উল্লেখ করেন, উপজেলার পাইলগাঁও ইউনিয়নের কাতিয়া গ্রামের সৈয়দ হাসন আলীর পুত্র মাওলানা জুয়েল আহমেদ জিতু মিয়া ও রাসেল গং এর নেতৃত্বে কুশিয়ারা নদীর পার্শ্ববর্তী কাতিয়া গ্রাম সংলগ্ন এলাকা থেকে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন ও বিক্রির মহা উৎসব শুরু হয়েছে। ঐ এলাকায় বর্তমানে নদী ভাঙ্গনে রোধে বেড়িবাঁধ ও ব্লকের কাজ চলছে। নদীর পাড় সংলগ্ন এলাকাবাসীর এই একটি মাত্র যাতায়াতের রাস্তা। মাটি ও বালু উত্তোলনের ফলে নদীর পাড়, রাস্তা, বেড়িবাঁধ, নদীর ব্লক ও ফেচির বাজার নদীতে তলিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা এলাকাবাসী ঝুঁকিপূর্ণ ও ভয়ের মধ্যে রয়েছি।
মেসার্স একতা এন্টারপ্রাইজ এর স্বত্তাধিকারী শফিক মোঃ জাবেদ এর নামে ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে অবাণিজ্যিকভাবে বালু উত্তোলনের অনুমোদন হয়। অনুমোদনের কাগজ পত্রের অপব্যবহার করে জুয়েলের নেতৃত্বে কুশিয়ারা নদীর বিভিন্ন জায়গা থেকে ডেজার মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে প্রতিদিন লক্ষ কোটি ঘনফুট বালু উত্তোলন ও বিক্রি করা হচ্ছে। এলাকার ফসলি জমি বাড়ি-ঘর নদীতে তলিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি নদী ভাঙ্গনে বেরিবাধ ও ব্লকের কাজ ব্যাহত হচ্ছে। এতে, এলাকাবাসী ও সরকারের সম্পদের অপব্যবহার করা হচ্ছে। পাশাপাশি স্থানীয় এসব এলাকাগুলো মারাত্মক ঝুকির মধ্যে রয়েছে। এই বালু কুশিয়ারা নদী থেকে নবীগঞ্জ উপজেলার কসবা ও মৌলভীবাজার জেলার শেরপুর সহ বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পত্রে উল্লেখ করেন তারা। অনতিবিলম্বে এসব ড্রেজার মেশিন দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন কারীদের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার আহবান জানান তারা। এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার দুপুরে জগন্নাথপুর থানার একদল পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে আসলে গ্রামবাসী জড়ো হয়ে পুলিশ সাথে ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগেই বালুখেকোরা পালিয়ে যায়। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের সু- দৃষ্টি কামনা করছেন সচেতন মহলের লোকজন।
বুলবুল আহমেদ, নবীগঞ্জ, হবিগঞ্জ