/
/
/
মৌলভীবাজারে প্রাণিসম্পদ অফিসের প্রকল্পে নয় ছয়
মৌলভীবাজারে প্রাণিসম্পদ অফিসের প্রকল্পে নয় ছয়
Relaks News 24
আপলোড সময় : 6 ঘন্টা আগে
মৌলভীবাজারে প্রাণিসম্পদ অফিসের প্রকল্পে নয় ছয়
Print Friendly, PDF & Email

মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলায় লাইভস্টক অ্যান্ড ডেইরি ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় হাঁস ও মুরগির ঘর নির্মাণ কাজে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিসের বিরুদ্ধে। উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রের বরাত দিয়ে জানা যায়, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের অধীনস্থ লাইভস্টক অ্যান্ড ডেইরি ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টেটি ২০১৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। সেই সময় জুড়ী উপজেলার ফুলতলা ইউনিয়নের কোনাগাঁও গ্রামের ৪০ জন খামারী নিয়ে দল গঠন করা হয়।

চলতি বছরে ওই গ্রামের ৪০ জন খামারি মহিলা সদস্যদের হাঁস মুরগির ঘর নির্মাণের জন্য ৮০ বাই ৬০ ইঞ্চির টিনের ঘর নির্মাণের জন্য বরাদ্ধ আসে। প্রতিটি ঘরের জন্য বরাদ্দ হয় ২০ হাজার টাকা করে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, খামারিদের নামে বরাদ্দকৃত ২০ হাজার টাকা চেকের মাধ্যমে তুলে খামারিরা ইচ্ছেমত টাকা যোগ করে ঘর বড় করতে পারবে। কোনক্রমেই এ বরাদ্দের টাকা ঠিকাদারকে দিয়ে কাজ করানোর কোন নিয়ম নেই‌। কিন্তু জুড়ী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা: রমা পদ দে ৪০ জন খামারির ২০ হাজার টাকার চেকে স্বাক্ষর নিয়ে পছন্দের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কতৃপক্ষের হাতে টাকা তুলে দেন। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার যোগসাজশে এ ২০ হাজার টাকা তুলে তার থেকে ৮-১০ হাজার টাকা খরচ করে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে ঘর নির্মাণ করার অভিযোগ রয়েছে। যা সম্পূর্ণ এ প্রকল্পের নিয়মবহির্ভূত। খামারিদের কাছ থেকে চেকে স্বাক্ষর নিয়ে টাকা উত্তোলন, নিম্নমানের কাজ ও মেয়াদ শেষ হলেও অনেকের এখনো ঘর নির্মাণ করে না দেওয়ায় প্রকল্প নিয়ে সাধারণ খামারিদের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। এ প্রকল্পের পুরো টাকা নিয়ে নয় ছয় হওয়ায় প্রকল্পের স্বার্থকতা মুখ থুবড়ে পড়েছে।

কৃষক ও খামারিদের দাবি, ডা: রমা পদ সহ অফিসের কর্মকর্তারা তাদেরকে দিয়ে চেকে স্বাক্ষর নিয়ে টাকা উত্তোলন করেছেন। পরে নিজের পছন্দের লোক দিয়ে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে ঘর তৈরি করে দিচ্ছেন। খামারিদের অভিযোগ, প্রতিটি ঘরের জন্য বরাদ্দ ২০ হাজার টাকা। কিন্তু তাদের যে ঘর নির্মাণ করে দিয়েছেন তাতে খরচ হয়েছে ৮-১০ হাজার টাকা।

অনুসন্ধানে জানা যায়, উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাদের যোগসাজশে ৪০ জন খামারিকে চেকে স্বাক্ষর রেখে মোট ৮ লক্ষ টাকা উত্তোলন করে পছন্দের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান তাহা এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক জামিল আহমেদকে ঘর নির্মাণের কাজ পাইয়ে দেন। তবে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা: রমা পদ দে কোন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজটি না দেওয়ার কথা বললেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তাহা এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী জামিল আহমদ কাজটি পাওয়ার কথা স্বীকার করেন।

সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এখনো বেশ কয়েকটি ঘরের কাজ নির্মাণ শেষ হয়নি। এক থেকে দেড় মাস আগে ঘরের খুঁটি বসালেও এখনো ঘরের কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় খামারিরা হতাশায় ভুগছেন। এছাড়া অনেক বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, একই পরিবারে দুই থেকে তিনটি ঘর দেওয়া হয়েছে। অপরদিকে অনেক খামারে গিয়ে দেখা যায় ঘর আছে কিন্তু হাঁস কিংবা মোরগ নেই। জানতে চাইলে খামারিরা জানান, যে ঘর আমাদেরকে নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে সেই ঘরে অনায়াসে শিয়াল বিড়াল ঢুকতে পারছে। এছাড়া নিম্নমানের কাজ হওয়ায় ঘরের পিলার ভেঙ্গে পড়া সহ দরজা ঠিকমতো বন্ধ করা যাচ্ছে না। খামারিরা জানান, বিশ হাজার টাকা আমাদেরকে দিলে আমরা এর চেয়ে উন্নত ঘর বানিয়ে কিছু টাকা দিয়ে হাঁস-মুরগি কিনতে পারতাম। ঘর নির্মাণে দুর্নীতি নিয়ে কথা বললে অনেকের ঘর ফেরত নিয়ে নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন কর্মকর্তারা এমনটাই জানিয়েছেন খামারিরা।

এ বিষয়ে সরজমিনে গেলে খামারি রাহেলা বেগম বলেন, টাকা তোলার জন্য আমাদেরকে ব্যাংকে নিয়ে টাকা উত্তোলন করে ঘর বানিয়ে দেবার কথা বলে ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে যান। অথচ কয়েকদিন আগে আমাদের স্যারেরা আমাদেরকে‌ মিটিং করে বলেন আমরা ঘর বানিয়েছি এমন কথা সবাইকে বলার জন্য। স্যারেরা যে ঘর বানিয়ে দিয়েছেন একথা যাতে কাউকে না বলি। কিন্তু কি ঘর বানাইলো বানানোর আগেই পিলার ভেঙ্গে গেছে। নেট ও ভালো করে লাগানো হয়নি, দরজা ও লাগেনা, মোটকথা কোনো কাজই ভালো করে করা হয়নি। শিয়াল কুকুর ঘরে হরহামেশা ডুকছে। আজকে মোরগ রাখলে কালকেই শিয়ালের পেটে চলে যাচ্ছে। ঠিকাদার যে ঘর তৈরি করেছে আমাদেরকে টাকা দিলে এর চেয়ে ডাবল সুন্দর ও মজমুদ করে ঘর বানাতে পারতাম। আর বাকি টাকা দিয়ে হাঁস-মুরগি কিনতে পারতাম। কাজ নিয়ে প্রতিবাদ করলে তারা ঘর ফেরত নেওয়ার হুমকি দিয়েছে।

খামারি আনোয়ারা বেগম বলেন, ব্যাংক থেকে টাকা তোলার পর আমরার হাত থেকে তারা টাকা নিয়ে নেয়। আমরার ঘর বানানো হয় নি। শিয়াল রাতে ঘরের ভিতর ঢুকে মোরগের পা ও মাথা টেনে নিয়ে যায়। ঠিকাদার যে ঘর বানিয়ে দিয়েছে এ কথা কাউকে না বলার জন্য অফিস থেকে স্যাররা বলে দিয়েছেন। আকলিমা বেগম বলেন, ঘর বানানোর জন্য ব্যাংক থেকে ২০ হাজার টাকা তুলে অফিসাররা নিয়ে যায়। ১ থেকে দেড় মাস আগে টাকা নিলেও এখন পর্যন্ত ঘরের পিলার ছাড়া কোন কাজই করেনি। খামারি মনিরা বেগম বলেন, আমরা মোরগের ঘর পেয়েছিলাম। ওই ঘর তৈরির জন্য ২০ হাজার টাকা লাগবে বলে সরকারি অফিসাররা জানান। আমাদেরকে ব্যাংকে নিয়ে টাকা উত্তোলন করে ঘর তৈরি করে দেবেন বলে টাকা নিয়ে যান। টাকার মুখ আমাদের দেখা হয়নি। আমরা নিজেরা যদি ঘর তৈরি করতে পারতাম তাহলে আরো ভালো ঘর হত।

এছাড়া কোনাগাঁও গ্রামের খামারি পিয়ারা বেগম, আয়শা আক্তার, ফুলবানু বেগম, আঙ্গুরুন বেগম, আখলিমা বেগম সহ বেশ কয়েকজন খামারিরা জানান, হাঁস-মোরগের ঘর তৈরির জন্য আমাদেরকে সরকার ২০ হাজার টাকা অনুদান দিয়েছিল। এই টাকা দিয়ে আমরা নিজেরা যে ঘর বানাতে পারবো এমনটি কেউ বলেনি। বরং অনেকটা ভয় দেখিয়ে ব্যাংকে থেকে স্বাক্ষর রেখে টাকা নিয়ে যান স্যাররা। এ বিষয়ে কাউকে কিছু জানালে ঘর ফিরিয়ে নেওয়ার হুমকিও দেন আমাদেরকে।

খামারিদের সভানেত্রী রিনা বেগম বলেন, স্যারদের ফোন পেয়ে ব্যাংকে গিয়ে টাকা উত্তোলন করে স্যারদের কাছে দিয়েছি। স্যাররা ঠিকাদার জামিল ভাইয়ের মাধ্যমে কাজ করিয়ে দিয়েছেন। আমরা টাকা নিয়ে ঘর বানাতে পারব এমন কথা কেউ আমাদেরকে বলে নি। জানলে আমরা নিজেই টাকা নিয়ে ঘর বানাতান। ঘর বানাতে এত টাকা লাগত না। এখনো অনেকের ঘর নির্মাণ না হওয়া সহ নানা অনিয়ম স্যারদের জানিয়েছি।

লাইভস্টক অ্যান্ড ডেইরি ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের এলএসপি (সমন্বয়কারী) সাইদুল ইসলাম বলেন, প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা রমা পদ দে স্যারের নির্দেশনা মতে সবাই ঠিকাদার জামিল সাহেবকে টাকা দিয়েছে। তিনি ঘর তৈরি করে দিয়েছেন। এ কাজ কোন ঠিকাদারকে না দিয়ে খামারিরা নিজেই ঘর তৈরি করার কথা এ প্রশ্ন করলে তিনি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সাফাই গেয়ে বলেন, এ ঘর নির্মাণে ঠিকাদারের কোন লাভ হয়নি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তাহা এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী জামিল আহমদ বলেন, আমরা কাজ পেয়েছি। কাজ চলমান আছে। এ কাজ তো আপনারা পাওয়ার কথা নয় এটি খামারিরা নিজে করার কথা, এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, সকল খামারিরা আমাদেরকে এ দায়িত্ব দিয়েছেন।

এ বিষয়ে জুড়ী উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা: রমা পদ দে বলেন, ‘উপজেলায় হাসঁ-মুরগির ঘর নির্মাণের জন্য ৪০ জনের নামে ২০ হাজার টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। খামারিরা নিজেরা ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিজেরাই ঘর তৈরি করেছে। তবে পছন্দের ঠিকাদারকে নিয়ম বহির্ভূতভাবে এ কাজ পাইয়ে দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি মুঠোফোনে এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। মৌলভীবাজার জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো আব্দুস ছামাদ বলেন, এ প্রকল্পের আওতায় খামারিদের নগদ বিশ হাজার টাকা দেওয়া এবং খামারিরা নিজেই ঘর নির্মাণ করার কথা। ঘর তৈরিতে অনিয়মের কোন অভিযোগ পেলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।

নিউজটি করেছেন : তিমির বনিক,মৌলভীবাজার প্রতিনিধি
{{ reviewsTotal }}{{ options.labels.singularReviewCountLabel }}
{{ reviewsTotal }}{{ options.labels.pluralReviewCountLabel }}
{{ options.labels.newReviewButton }}
{{ userData.canReview.message }}

এ জাতীয় আরো খবর

Untitled design (6)
নবীগঞ্জে ১৬শ পিস ইয়াবাসহ ১ মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার
Untitled design (7)
উন্নয়নের স্বার্থে নৌকা মার্কায় ভোট দিন- সিটি মেয়র ...
Untitled design (8)
সুনামগঞ্জ জেলার ৬ ওসি বিভিন্ন থানায় বদলি
Untitled design (2)
তেজগাঁও দুর্ঘটনা ৭ ঘণ্টা পর সারা দেশের সঙ্গে রেল য...
Untitled design (1)
পবিত্র কুরআন পোড়ানো নিষিদ্ধ করে ডেনমার্কে বিল পাস
Untitled design (3)
লেবাননে ইসরায়েলি গোলাতেই নিহত হয়েছিলেন রয়টার্স সাং...
Untitled design (4)
নির্বাচনে কোনো অবস্থায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে দেওয়া...
Untitled design (5)
সিলেট বিভাগের ২৬ থানায় ওসি রদবদল, কে কোথায়?
Untitled design (7)
বাগেরহাটে আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ...
Untitled design (5)
নিউ মার্কেটের কেয়ারটেকারের রহস্যজনক মৃত্যু
Untitled design (6)
নবীগঞ্জে ১৬শ পিস ইয়াবাসহ ১ মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার
Untitled design (7)
উন্নয়নের স্বার্থে নৌকা মার্কায় ভোট দিন- সিটি মেয়র ...
Untitled design (8)
সুনামগঞ্জ জেলার ৬ ওসি বিভিন্ন থানায় বদলি
Untitled design (2)
তেজগাঁও দুর্ঘটনা ৭ ঘণ্টা পর সারা দেশের সঙ্গে রেল য...
Untitled design (1)
পবিত্র কুরআন পোড়ানো নিষিদ্ধ করে ডেনমার্কে বিল পাস
Untitled design (3)
লেবাননে ইসরায়েলি গোলাতেই নিহত হয়েছিলেন রয়টার্স সাং...

Log in

Not registered? Join us FREE