২০২৩ সালে দেশে ৬ হাজার ২৬১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৭ হাজার ৯০২ জন নিহত হয়েছে। তবে এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে মোটরসাইকেলে। এই সময়ে ২ হাজার ৩১টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ২ হাজার ১৫২ জন নিহত হয়েছে। যাত্রী কল্যাণ সমিতির দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের বার্ষিক দুর্ঘটনা পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। রোববার রিপোর্টার্স ইউনিটিতে যাত্রী কল্যাণ সমিতির সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী এই প্রতিবেদন তুলে ধরেন।
প্রতিবেদনে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে দেশে ৬ হাজার ২৬১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৭ হাজার ৯০২ জন নিহত হয়েছে। এ সময় আহত হয়েছে ১০ হাজার ৩৭২ জন। ২০২৩ সালে রেলপথে ৫২০টি দুর্ঘটনায় ৫১২ জনের মৃত্যু ও ৪৭৫ জন আহত হয়েছেন। নৌপথে ১৪৮ দুর্ঘটনায় ৯১ জনের মৃত্যু, ১৫২ জন আহত ও ১০০ জন নিখোঁজ হয়েছেন। সড়ক, রেল ও নৌপথে ৬ হাজার ৯২৯টি দুর্ঘটনায় ৮ হাজার ৫০৫ জন নিহত হয়েছেন। এসব দুর্ঘটনার নিহতদের ৩২ দশমিক ৩৪ শতাংশই মোটরসাইকেল আরোহী।
গত ৯ বছরে নিবন্ধিত যানবাহনের পাশাপাশি ছোট যানবাহন বিশেষ করে মোটরসাইকেল ও ইজিবাইকের সংখ্যা চার থেকে পাঁচ গুণ বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি ইজিবাইক, মোটরসাইকেল ও থ্রি-হুইলার সরকারের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কে অবাধে চলাচলের কারণে সড়কে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি বাড়ছে। প্রতিবেদন বলছে, ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে দুর্ঘটনায় সংগঠিত যানবাহনের ১১ দশমিক দুই দুই শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিকশা-ভ্যান-ইজিবাইক, ২ দশমিক ৮২ শতাংশ বাস সড়কে দুর্ঘটনায় বৃদ্ধি পেয়েছে।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির পর্যবেক্ষণ মতে সড়ক দুর্ঘটনার কয়েকটি কারণ হলো, বেপরোয়া গতি, বিপজ্জনক ওভারটেকিং, রাস্তাঘাটের নির্মাণ ত্রুটি, ফিটনেসবিহীন যানবাহনের অবাধে চলাচল, যাত্রী ও পথচারীদের অসতর্কতা, চালকের অদক্ষতা, যানবাহন চালক ও মালিকের বেপরোয়া মনোভাব, চলন্ত অবস্থায় মোবাইল বা হেডফোন ব্যবহার, মাদক সেবন করে যানবাহন চালানো, রেলক্রসিং ও মহাসড়কে হঠাৎ ফিডার রোড থেকে যানবাহন উঠে আসা প্রভৃতি। প্রতিবেদন বলছে, দেশব্যাপী নিরাপদ, আধুনিক, স্মার্ট গণপরিবহন ব্যবস্থার পরিবর্তে টুকটুকি-ইজিবাইক-ব্যাটারিচালিত রিকশা, মোটরসাইকেল, সিএনজিচালিত অটোরিকশা নির্ভর গণপরিবহন ব্যবস্থার দিকে ধাবিত হওয়ার কারণে সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি বেপরোয়াভাবে বাড়ছে।
সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সুপারিশ:
১. করোনার চেয়ে ভয়াবহ মহামারি বিবেচনায় সরকারের প্রথম অগ্রাধিকার প্রকল্পে সড়ক নিরাপত্তার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা।
২. নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী দ্রুত সড়ক নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করা।
৩. সড়ক নিরাপত্তায় বাজেট বরাদ্দ বাড়ানো, সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ে গঠিত সড়ক নিরাপত্তা ইউনিট শক্তিশালী করা।
৪. সড়ক নিরাপত্তায় ইতিমধ্যে প্রণীত যাবতীয় সুপারিশমালা বাস্তবায়ন করা।
৫. দেশের সড়ক-মহাসড়কে রোড সাইন, রোড মার্কিন (ট্রাফিক চিহ্ন) স্থাপন করা। জেব্রা ক্রসিং অংকন ও আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা।
৬. গণপরিবহন চালকদের যুগোপযোগী পেশাদার ট্রেনিং ও নৈতিক শিক্ষার ব্যবস্থা করা।
৭. সড়ক পরিবহন সেক্টরে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা। অনিয়ম-দুর্নীতি ও চাদাঁবাজি বন্ধ করা।
৮. গাড়ির নিবন্ধন, ফিটনেস ও চালকদের লাইসেন্স প্রদানের পদ্ধতি উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে আধুনিকায়ন করা।
৯. সড়ক দুর্ঘটনায় আর্থিক সহায়তা তহবিলে আবেদনের সময়সীমা ছয় মাস নির্ধারণ করা।
১০. স্মার্ট গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে দেশব্যাপী পর্যাপ্ত মানসম্মত নতুন বাস সার্ভিস চালুর উদ্যোগ নেওয়া।
১১. ট্রাফিক পুলিশের কর্মকর্তা ও সদস্যদের প্রশিক্ষণের জন্য ট্রাফিক ট্রেনিং একাডেমি গড়ে তোলা।
১২. উল্টো পথের আলো এবং পথচারীর পারাপার রোধে মহাসড়কের রোড ডিভাইডার পর্যাপ্ত উঁচু করা।
১৩. গণপরিবহনে সেবা ও নিরাপত্তার মান পর্যবেক্ষণের জন্য মন্ত্রী পরিষদের সদস্য, সংসদ সদস্য, সচিব, জেলা প্রশাসকদের প্রতিমাসে একদিন পরিচয় গোপন রেখে গণপরিবহন ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা।