জীবন বাঁচাতে সংঘাতময় মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছেন মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) ৬৮ সদস্য। মিয়ানমারে চলমান সংঘর্ষের জেরে এখন পর্যন্ত দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ৬৮ সদস্য অস্ত্রসহ বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন। তাদের অস্ত্র ও গুলি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) কাছে জমা রাখা হয়েছে। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মিয়ানমারের এই সীমান্তরক্ষীরা রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) কয়েক দফায় বান্দরবানের তুমব্রু সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশ সীমানায় ঢোকেন। বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফুল ইসলাম রাত ১২টায় এক বার্তায় এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান সংঘর্ষের জেরে এখন পর্যন্ত মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) এর ৬৮ জন সদস্য অস্ত্রসহ বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন। বিজিবি তাদেরকে নিরস্ত্রীকরণ করে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়েছে। এরমধ্যে আহত ১৫ জন সদস্যকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
মিয়ানমার থেকে আসা গুলি ও মর্টার শেল এসে পড়ছে বাংলাদেশে। গুলিতে অন্তত দুই বাংলাদেশি আহত হয়েছেন। উড়ে আসা গোলার আঘাতে পুড়ে গেছে অন্তত তিনটি বাড়ি। মিয়ানমারের রাখাইনে গুলিবিদ্ধ হয়ে সে দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিপি) সদস্য ও সাধারণ অনেক নাগরিক আশ্রয় নিচ্ছেন বাংলাদেশে। ইতোমধ্যে আহত বেশ কয়েকজনকে কক্সবাজার ও বান্দরবানের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অনেকে আশ্রয় নিয়েছেন বিজিবির বিভিন্ন ক্যাম্পে।
রাখাইনে সংঘর্ষ চলাকালে হেলিকপ্টার থেকে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকায় ব্যাপক হামলা করছে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী। বান্দরানের ঘুমধুম সীমান্ত এলাকায় রোববার বিকেলে কয়েক দফায় হেলিকল্টার চক্কর দিতে দেখা গেছে বলে সেখানকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন। হেলিকপ্টার থেকে ছোড়া গুলিতে নজরুল ইসলাম টিটু নামে বাংলাদেশি এক যুবক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।
ঘুমধুম ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আনোয়ার হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, তুমব্রুর পশ্চিম কুল এলাকায় টিটু নিজ বাড়ির সামনে গুলিবিদ্ধ হন। তাকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এর আগে সকাল ১০টার দিকে তুমব্রু সীমান্তে গুলিবিদ্ধ হন প্রবীর চন্দ্র ধর নামে এক ব্যক্তি। তিনি ঘুমধুম ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের হিন্দু পাড়ার বাসিন্দা।
আনোয়ার আরও জানান, শনিবার রাত থেকে তুমুল সংঘর্ষের মধ্যে বাংলাদেশের ভিতরে বেশ কিছু গুলি ও মর্টার শেল এসে পড়েছে। এতে কমপক্ষে তিনটি বসতঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রাতে বাইশফাঁড়ি এলাকার প্রবাসী নুরুল কবীরের বাড়িতে বারুদের গোলা পড়ায় বাড়িটি ভস্মীভূত হয়েছে। আগের দিন শনিবার বিকেলে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে একটি গুলি এসে অটোরিকশায় লেগে এর কাচ ভেঙে যায়।
বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন জানিয়েছেন, সীমান্তের গোলাগুলির ঘটনায় ঘুমধুম সীমান্তে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তবে পরিস্থিতি অনুকূলে আছে। সীমান্তের লোকজনকে সতর্ক ও নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে। সীমান্তে যেকোনও পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিজিবি সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।