স্বপ্নের শহর লন্ডনেও রাস্তায় ঘুমায় হাজারো মানুষ
লন্ডন | লন্ডন
বিশ্বের অন্যতম ধনী দেশ ব্রিটেনের রাজধানী লন্ডনের ২০২৩ সালের জুলাই মাসের দৃশ্য এটি। দেশের সবচেয়ে বিখ্যাত শপিং এলাকা অক্সফোরড স্ট্রীটে রাত ৩টায় বিবিসির প্রতিবেদক হাঁটতে গিয়ে দেখেন দীর্ঘ এই রাস্তার সামান্য একটি অংশেই ঘুমিয়ে আছেন অর্ধ শতাধিক মানুষ। এভাবে উন্মুক্ত স্থানে যারা ঘুমায় তাদেরকে বলা হয় রাফ-স্লিপার। অক্সফোরড স্ট্রীটে যারা ঘুমিয়ে ছিল তাদের অধিকাংশ এসেছে রোমানিয়া থেকে। এদের কারো চাকুরী আছে, কেউ ভিক্ষাবৃত্তি করেন, কেউ অবৈধ ইমিগ্রেনট, কিন্তু সবাই হোমলেস। তাদের মধ্যে অধিকাংশ পুরুষ। তবে নারী এবং যুগলও আছেন। রোমানিয়া থেকে আসা ২৪ বছর বয়স্ক ফারনান্দো জানালেন, এমনও সময় যায় যখন তাঁর খাবার থাকেনা, পকেটে টাকা থাকেনা। ঘুমিয়ে থাকার সময় অনেকে তাদের ওপর আবর্জনা ফেলে চলে যান, কেউ কেউ গায়ে লাথে দিয়ে চলে যায়; দুর্ব্যবহার করে।
রাফ স্লিপারদের জন্য সেবার দরজা খুলে রেখেছে কিছু সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। এমন একটি সংস্থা হোয়াইটচ্যাপেল মিশন। হোয়াইটচ্যাপেলের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত রাফ স্লিপাররা আসেন নান রকম সাহায্য পেতে এবং দিনে অন্তত এক বেলা খাওয়ার জন্য। হোয়াইটচ্যাপেলের পাশেই এক হোস্টেলে বসবাস করেন হোসেইন। মহামারির সময়ে তিনি আরও কিছু রোমানিয়ানের সাথে একটি ব্রিজের নীচে ঘুমিয়েছেন। হোসেইন জানালেন, হোয়াইটচ্যাপেল মিশনের মতো প্রতিষ্ঠানের কারণে তিনি আজও বেঁচে আছেন।
লন্ডন সহ সারা দেশে রাফ স্লিপার বেড়ে গেছে। এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত লন্ডনের রাস্তায় ৩ হাজারের বেশী রাফ স্লিপার রাস্তাঘাটে ঘুমিয়েছেন। এদের মধ্যে ১৬শ’র বেশী নতুন। অর্থাৎ এর আগে কখনও তাঁরা রাফ স্লিপার ছিলেন না। নটিংহামের বাসিন্দা ৪১ বছর বয়স্ক তাসোস সাভিদস গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে রাফ স্লিপিং করেন। ভালো পেতেন সাবেক এই আইটি কনসালট্যানট। তিনি যে ঘরে ভাড়া থাকতেন সেখানকার বাড়িওয়ালা অপ্রাত্তাশিতভাবে তাকে ঘর ছেড়ে দিতে বলে। এরপর নতুন আরেকটি ঘর ভাড়া করার মতো আর্থিক সামর্থ্য ছিলনা তাঁর। তাই নিজের গাড়িতেই বসবাস করেন তিনি। নটিংহামে গত এক বছরে রাফ স্লিপারের হার বেড়েছে ৪১ শতাংশ। ঘর কেনা এবং ঘর ভাড়া বেড়ে যাওয়া রাফ স্লিপিং এর অন্যতম কারণ। গত সপ্তাহে সরকার তাদের রাফ স্লিপিং নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত কৌশল প্রকাশ করেছে। চলতি পার্লামেন্টের শেষ নাগাদ রাফ স্লিপিং এর সমাপ্তি দেখতে চায় সরকার।