টাঙ্গাইল শাড়ির স্বত্ব ভারতের বলে দাবি করা একটি ফেসবুক পোস্ট সরিয়ে নিয়েছে ভারতের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। গতকাল সোমবার থেকে মন্ত্রণালয়টির ফেসবুক পেজে ওই পোস্ট আর দেখা যাচ্ছে না। বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী টাঙ্গাইল শাড়িকে গত ২ জানুয়ারি নিজেদের ‘জিআই পণ্য’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় ভারত। কিন্তু বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে গত বৃহস্পতিবার ভারতের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে একটি পোস্ট দেওয়ার পর।
ওই পোস্টে বলা হয়েছিল, ‘টাঙ্গাইল শাড়ি পশ্চিমবঙ্গ থেকে উদ্ভূত। এটি ঐতিহ্যবাহী হাতে বোনা মাস্টারপিস। এর মিহি গঠন, বৈচিত্র্যময় রঙ এবং সূক্ষ্ম জামদানি মোটিফের জন্য বিখ্যাত। এটি এ অঞ্চলের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতীক। টাঙ্গাইলের প্রতিটি শাড়ি ঐতিহ্য ও সমৃদ্ধ সৌন্দর্যের মেলবন্ধনে দক্ষ কারুকার্যের নিদর্শন।’
পোস্টটি নজরে আসার পরপরই বাংলাদেশজুড়ে তীব্র বিতর্ক ওঠে এবং টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই স্বত্ব বাংলাদেশের নেয়ার দাবি ওঠে। ভারতের পেটেন্ট, ডিজাইন অ্যান্ড ট্রেড মার্কস বিভাগ থেকে জানা গেছে, ২০২০ সালের ৮ সেপ্টেম্বর পশ্চিমবঙ্গের তন্তুবায়ী সমবায় সমিতি টাঙ্গাইল শাড়ির পেটেন্ট দাবি করে ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে। সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডিজাইন অ্যান্ড ট্রেড মার্কস বিভাগ টাঙ্গাইল শাড়িকে পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া ও পূর্ব বর্ধমানের পণ্য স্বীকৃতি দেয়।
শাড়িটির জিআই চিহ্ন হিসেবে বলা হয়েছে, এর নাম ‘বাংলার টাঙ্গাইল শাড়ি’। শান্তিপুর ডিজাইন ও ঢাকাই টাঙ্গাইলের সংমিশ্রণে এক ধরনের সংকর শাড়ি এটি। বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে ভারতেই সেটি তৈরি হয়েছে। তাই উৎপত্তি পশ্চিমবঙ্গ এবং অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত দেশ হিসেবে ভারতের কথা উল্লেখ করা হয়েছে আবেদনে। একই সঙ্গে এ রেজিস্ট্রেশনের বৈধতা ২০৩০ সালের ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত থাকবে বলে স্বীকৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
আবেদনপত্রে আরো উল্লেখ করা হয়, নদীয়া জেলায় ফুলিয়াকে ঘিরে থাকা তাঁতি গোষ্ঠী এবং বাংলাদেশের টাঙ্গাইল থেকে যাওয়া তাঁতিরা বর্তমানে ‘বাংলার টাঙ্গাইল শাড়ি’ তৈরি করেন। এ শাড়ির উৎপত্তি ভারতের পশ্চিমবঙ্গে। বর্তমান পূর্ব ব্রাহ্মণপাড়ার ধাত্রিগ্রাম ও সমুদ্রগড় এবং নদীয়ার ফুলিয়া শহরে তৈরি হয় এ শাড়ি। পাশাপাশি আরো কিছু স্থানেও তৈরি হয়।
কিন্তু গবেষক ও ইতিহাসবিদেরা বলছেন, টাঙ্গাইল শাড়ির উৎপত্তি বাংলাদেশে এবং এর নামের মধ্য দিয়েই তা উঠে এসেছে। বাংলাদেশের জলবায়ু নাতিশীতোষ্ণ হওয়ায় টাঙ্গাইলের ছেলেরা পরিধেয় বস্ত্র হিসেবে লুঙ্গি-গামছা এবং মেয়েরা শাড়ি পরিধান করে, যা টাঙ্গাইল শাড়ি হিসেবে পরিচিত হয়েছে। টাঙ্গাইল অঞ্চলটি যখন থেকে গড়ে ওঠে তখনই এ শাড়ি তৈরি শুরু হয়।
এদিকে টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই নিয়ে গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘ভারতে পেটেন্ট রাইট করেছে। তারা এটি কীভাবে করেছে, তাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। আমাদের জানা নেই। তবে আমরা এটি নিয়ে আজ জরুরিভাবে মন্ত্রণালয়ে বসেছি। আমরা বৈঠক করেছি। টাঙ্গাইল শাড়ি আমাদের থাকার জন্য যা যা ব্যবস্থা নেয়ার, আমরা খুব দ্রুত সে ব্যবস্থা নিচ্ছি।’