একদিকে চার বছর পর আসা ২৯ ফেব্রুয়ারি, অন্যদিকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পরের সময়। সবমিলিয়ে গতকাল বেইলি রোডে ছিল উপচেপড়া ভিড়। তার উপর গ্রীন কোজি কটেজ ভবনের দোতলায় থাকা কাচ্চি ভাইয়ে চলছিল ২০ শতাংশ ছাড়। ফলে ওই ভবন ভর্তি ছিল ক্রেতা। লোকে লোকারণ্য ভবনের প্রবেশ পথেই রাত পৌনে ১০টার দিকে লাগে ভয়াবহ আগুন। এখন পর্যন্ত ৪৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
শুক্রবার সকালে গতকালের আগুন লাগার মূহুর্ত নিয়ে কয়েকজন এলাকাবাসী কথা বলেন সময় সংবাদের সাথে। তাদের কথায় উঠে এসেছে মূলত ২৯ ফেব্রুয়ারি উপলক্ষ্যে কাচ্চি ভাইয়ের অফার এবং বৃহস্পতিবার হওয়ায় অন্য দিনের তুলনায় ভিড় বেশি ছিল।
৫০ ঊর্ধ এক এলাকাবাসী বলেন, ‘আমরা জানি ২৯ ফেব্রুয়ারির কারণে ২০ শতাংশ ডিসকাউন্ট ছিল। আমাদের অফিসের কোন প্রোগ্রাম থাকলে আমরা এখান থেকে বিরিয়ানি নেই। আমার দু’জন বন্ধু আসছে, একজন চট্টগ্রাম অন্যজন ফেনী থেকে। ওদের বললাম চল, কাচ্চি ভাই থেকে বিরিয়ানি খেয়ে আসি।’
‘আমি আসার পর ২০ মিনিটের মতো জায়গা পায়নি। এতো মানুষ ছিল। এর পেছনে বৃহস্পতিবার, ২৯ ফেব্রুয়ারি আবার কাচ্চি ভাইয়ের অফার- সব মিলে গতকাল অনেক চাপ ছিল।’ আর কাচ্চি ভাই তাদের এই অফারের কথা এক সপ্তাহ আগেই ঘোষণা দিয়েছিল বলেও জানান তিনি। বলেন, ‘যেখান থেকে আগুনের সূত্রপাত সেখানেও আমরা চা খেয়েছি। এরপর কাচ্চি খেয়ে শনির আখড়ায় গিয়ে শুনি আগুন লেগেছে।‘
আরও একজন পথচারী জানান, ভোরে ফজরের নামাজ পড়তে মসজিদে গিয়ে তিনি স্থানীয় মুসল্লিদের কাছে জানতে পারেন কাচ্চি ভাইয়ে ২০ শতাংশ ছাড় চলছিল। প্রচুর ভিড় ছিল। সবাই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছিল। এদিকে, শুক্রবার (১ মার্চ) সকালে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে আয়োজিত এক বিফ্রিং এ স্বাস্থ্যমন্ত্রী ড. সামন্ত লাল সেন জানান, রাজধানীর বেইলি রোডের বহুতল ভবনে ভয়াবহ আগুনের ঘটনায় এ পর্যন্ত ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া, এ ঘটনায় দ্বগ্ধ চিকিৎসাধীন ব্যক্তিরাও শঙ্কামুক্ত নন বলেও জানিয়েছেন তিনি।
বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অন্তত ৭৫ জনকে জীবিত উদ্ধার হয়েছে। অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয় আরও ৪২ জনকে। একই পরিবারের পাঁচজনসহ মারা গেছেন ৪৬ জন। এর মধ্যে ঢামেক হাসপাতালে ৩১, শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ১০ এবং রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে একজন মারা গেছেন। এ ছাড়া ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা হয় তিনটি মরদেহ।
এখন পর্যন্ত ৩১ জনের মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে। দগ্ধ ১৩ জনের অবস্থাও আশঙ্কাজনক। আগুনে হতাহতের ঘটনায় শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী। ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া সেল থেকে জানানো হয়, বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) রাত ৯টা ৫০ মিনিটে আগুন লাগার খবর পান তারা। প্রথম ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছায় ৯টা ৫৬ মিনিটে। পরে আগুনের ভয়াবহতা ছড়িয়ে পড়লে আরও ১২টি ইউনিট ঘটনাস্থলে যায়। আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে পুলিশ, আনসার, র্যাব ও এনএসআই। ১৩টি ইউনিটের ২ ঘণ্টার চেষ্টায় রাত ১১টা ৫০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। ভবনটিতে পিৎজা ইন, স্ট্রিট ওভেন, খানাসসহ আরও রেস্টুরেন্ট রয়েছে। এছাড়া ইলিয়েন, ক্লোজেস্ট ক্লাউডসহ জনপ্রিয় বিপণিবিতানও রয়েছে।