রাজধানীর বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৩৮ জনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। শুক্রবার সকাল থেকে পরিচয় নিশ্চিত হওয়া মরদেহগুলো তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার রাতে লাগা ভয়াবহ এ আগুনে এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ৪৬। ফায়ার সার্ভিসের ১৩ ইউনিটের চেষ্টায় দুই ঘন্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও পুড়ে গেছে বাণিজ্যিক ভবনটি। ভয়াবহ এ অগ্নিকান্ডের ঘটনায় শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলীয় নেতা।
স্মৃতি হিসেবে রয়ে গেল তুষারের ছবিস্মৃতি হিসেবে রয়ে গেল তুষারের ছবি নিহতদের মধ্যে আছেন ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রভাতী শাখার শিক্ষক লুৎফুন নাহার লাকি ও তাঁর মেয়ে নিকিতা। বৃহস্পতিবার রাতেই স্ত্রী ও মেয়ের লাশ শনাক্ত করেন গোলাম মহিউদ্দিন। এ ঘটনায় নিহত হয়েছেন ভবনটি দ্বিতীয় তলার রেস্টুরেন্ট ‘কাচ্চি ভাই’ এর ক্যাশিয়ার কামরুল হাসান রকি ও ওয়েটার জাহিদুর রহমান।
রেস্টুরেন্টটির কর্মী আলতাফ বলেন, ‘আগুন লাগার পর ওই রেস্টুরেন্টে থাকা সবাইকে দ্রুত বের হতে সাহায্য করেন ক্যাশিয়ার কামরুল ও এক ওয়েটার জাহিদুর। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা নিজেরাই আর বের হতে পারেন নি। আগুন লাগার পর আমি রান্নাঘরে যাই এবং একটি জানালা ভেঙে লাফ নিয়ে নিজের প্রাণ বাঁচাই।’
ভয়াবহ আগুনে পুড়ে মারা গেছেন বেসরকারি আইএফআইসি ব্যাংকের কর্মকর্তা মেহরান কবির দোলা এবং তাঁর ছোট বোন মাইশা কবির মাহি। দোলার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে তাঁর স্বজন হাসান বাপ্পি বলেন, ‘যতদূর জানি বোনকে নিয়ে ভবনটির কোনো একটি রেস্টুরেন্টে গিয়েছিলেন দোলা আপু। সেখানে আগুন লাগলে আটকা পড়ে তারা দুজনই মারা যান।’
বেইলি রোডে আগুন: নিহতদের জন্য রাষ্ট্রপতি–প্রধানমন্ত্রীর শোক বেইলি রোডে আগুন: নিহতদের জন্য রাষ্ট্রপতি–প্রধানমন্ত্রীর শোক বাপ্পি জানান, দোলা স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও ডেফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে কম্পিউটার প্রকৌশল বিভাগে স্নাতকোত্তর শেষে ব্যাংকের চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন। দোলার বোন মাহি স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তাঁদের গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলে।
কাচ্চি খেতে গিয়ে ২ সন্তানসহ পুড়ে মারা গেছেন পপি রাণী দাশ নামে এক নারী। তাঁর মা বাসনা বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, বইমেলা থেকে ফেরার সময় দুই সন্তানসহ রেস্টুরেন্টে খেতে যান তারা। বেইলি রোডের ভয়াবহ এ আগুনে নিভে গেছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী নাহিয়ান আমিন ও লামিশা ইসলামের আলো।
এ ঘটনায় আহত অবস্থায় উদ্ধার হওয়া যুবক জুয়েল (৩০) শুক্রবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজের হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টায় ভবনটিতে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলতে থাকে। ৯টা ৫৬ মিনিটে ফায়ার সার্ভিসের ৬টি ইউনিট কাজ শুরু করে। একে একে যোগ দেয় ১৩টি ইউনিট। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, হঠাৎ বিকট শব্দ শুনতে পান তারা। মূহুর্তেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে পুরো ভবনে।
প্রথম দুই ঘণ্টা কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। তবে রাত ১২টার পর থেকে আহত ব্যক্তিদের ভবন থেকে বের করে আনা হয়। ফায়ার সার্ভিস বলছে, পুরো ভবনে অসংখ্য গ্যাস সিলিন্ডার মজুত ছিল। এমনকি সিঁড়িতেও মজুত ছিল সিলিন্ডার। ফলে ভবনটিতে আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে তা দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে। ভবনটিতে পর্যাপ্ত অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা ছিল না বলে জানিয়েছে পুলিশ। ভবনটিতে কাচ্চি ভাই, পিৎজা ইন, স্ট্রিট ওভেন, খানাসসহ বেশ কয়েকটি রেস্টুরেন্ট রয়েছে। এছাড়া ইলিয়েন, ক্লোজেস্ট ক্লাউডসহ বেশকিছু জনপ্রিয় পোশাকের দোকানও রয়েছে। ঘটনা তদন্তে এরই মধ্যে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি করেছে ফায়ার সার্ভিস।