হিন্দু-মুসলিম নামের ধর্মাবলম্বী বিতর্কে রাজধানীর বেইলি রোডে আগুনে নিহত এক তরুণীর মরদেহ দীর্ঘ সময় মর্গে পড়ে ছিল । অভিশ্রুতি শাস্ত্রী নামের ওই নারী সাংবাদিককে শুক্রবার সকালে তার কর্মরত পোর্টাল ‘দ্য রিপোর্ট ডট লাইভের’ প্রধান প্রতিবেদক গোলাম রাব্বানী মরদেহটি শনাক্ত করেন। সে সময় তিনি বলেন ওই নারী সাংবাদিকের নাম অভিশ্রুতি শাস্ত্রী।
কিন্তু অভিশ্রুতি শাস্ত্রীর মরদেহের দাবিদার হিসেবে বাবা সবুজ শেখ জাতীয় পরিচয় পত্র নিয়ে মরদেহটি সনাক্ত করেন। আর এই বিতর্কেই মরদেহটি দীর্ঘ সময় বিতর্কের সৃষ্টি করে মরদেহ পড়ে থাকে মর্গে। পরে অভিশ্রুতি ওরফে বৃষ্টি খাতুনের বাবার দাবি ও এনআইডির ফিঙ্গারপ্রিন্টের সূত্রে এই বিতর্কের অবসান হয়।বাবা সবুজ শেখ এরপরে হাতেই তুলে দেয়া হয় বৃষ্টির মরদেহ।
বিষয়টি নিশ্চিত করে শুক্রবার (১ মার্চ) রাতে সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে তার মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয় বলে জানিয়েছেন শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে দায়িত্বরত পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুল জব্বার। মেয়ের মৃত্যুর খবরে কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলা থেকে শুক্রবার দুপুরে ছুটে ঢাকায় আসেন বৃষ্টি খাতুনের বাবা সবুজ শেখ। বুধবার রাত থেকে অজ্ঞাত পরিচয়ে পড়ে থাকা মেয়ের মরদেহ দেখে তার পরিচয় শনাক্ত করেন। তবে এরপরই বাধে বিপত্তি।
মরদেহটি দেখে তার সহকর্মী ও পরিচিতরা দাবি করেন, নিহত তরুণীর নাম অভিশ্রুতি শাস্ত্রী। সনাতন ধর্মের অনুসারী তিনি। তবে তাদের এই দাবি কোনোভাবেই মানতে নারাজ বাবা পরিচয় দেয়া মুসলিম ধর্মাবলম্বী সবুজ শেখ। সবুজ শেখ ও স্বজনরা তার জাতীয় পরিচয়পত্র দেখিয়ে তাকে বৃষ্টি খাতুন বলে দাবি করছিলেন, ঠিক তখন সনাতন ধর্মের কয়েকজন তার ফেসবুক আইডি ও সিভি দেখাচ্ছিলেন সাংবাদিকদের। তাদের দাবি ছিল, পূজার্চনা করা অভিশ্রুতি শাস্ত্রীর আসল বাবা- মাকে খুঁজে বের করে তাদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হোক।
পরে পরিচয় নিশ্চিত হতে শুক্রবার ওই নারী সাংবাদিকের ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিয়ে পরীক্ষা করা হয়। তাতে দেখা যায়, জাতীয় পরিচয়পত্রে তার নাম বৃষ্টি খাতুন। বাবার নাম সবুজ শেখ আর মায়ের নাম বিউটি বেগম। জাতীয় পরিচয় পত্র অনুযায়ী, ওই সাংবাদিকের বাড়ি কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার বনগ্রাম গ্রামে। এই তথ্যএ তার পরিচয় শনাক্ত হওয়ায় সাংবাদিক অভিশ্রুতি ওরফে বৃষ্টির মরদেহ তার বাবা-মায়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
এরআগে, বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) রাত ৯টা ৫০ মিনিটে বেইলি রোডের একটি ভবনে আগুন লাগার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। প্রথম ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছায় ৯টা ৫৬ মিনিটে। পরে আগুনের ভয়াবহতা ছড়িয়ে পড়লে আরও ১২টি ইউনিট ঘটনাস্থলে যায়। আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে পুলিশ, আনসার, র্যাব ও এনএসআই। ১৩টি ইউনিটের ২ ঘণ্টার চেষ্টায় রাত ১১টা ৫০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে আগুনের এ ঘটনায় শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৬ জন।