শেরপুর জেলার শ্রীবরদী উপজেলায় সেনাসদস্য বটন কান্তি বড়ুয়া হত্যা মামলায় ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি মো. বাবুল মিয়াকে (৫৬) ১৫ বছর পর ঢাকার উওরা থেকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১৪। শুক্রবার রাতে ঢাকার উত্তরা থেকে র্যাব-১ উত্তরা, ঢাকা ও র্যাব-১৪ জামালপুর যৌথ অভিযান চালিয়ে বাবুল মিয়াকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতার বাবুল মিয়া শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার খৈলকুড়ার আলী হোসেনের ছেলে। শনিবার তাকে শ্রীবরদী থানা পুলিশের মাধ্যমে আদালতে সোপর্দ করা হয়। পরে তাকে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
র্যাব জানায়, চট্টগ্রাম জেলার কোতয়ালী উপজেলার আনোয়ারার বাসিন্দা বটন কান্তি বড়ুয়া সেনাবাহিনীতে চাকরি করার সময় সপরিবারে ঢাকার মাটিকাটা ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় বসবাস করতেন। আসামি বাবুল মিয়া মাটিকাটা এলাকায় সবজির ব্যবসা করতেন। সেনাসদস্য বটন কান্তি বড়ুয়া বাবুল মিয়ার সবজির দোকানে সবজি কেনার সুবাদে তাঁর সঙ্গে পরিচয় হয় ও সখ্যতা গড়ে ওঠে। এক পর্যায়ে সেনাসদস্য বটন কান্তি তাঁর ছেলেসন্তান না হওয়ার বিষয়ে বাবুল মিয়াকে জানান। পরে বটন কান্তিকে বাবুল জানান যে, তাঁর পরিচিত শেরপুরে একজন ভালো কবিরাজ আছেন। স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য বটন কান্তি ও বাবুল মিয়া সেই কবিরাজ মো. হাবিবুর রহমানের বাড়িতে যান।
এরপর চিকিৎসার ওষুধের টাকা দেওয়া-নেওয়াকে নিয়ে ২০০৯ সালের ১০ এপ্রিল তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে বটন কান্তি বড়ুয়াকে হত্যা করে লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে কবিরাজ হাবিবুর রহমানের ঘরের মেঝেতে পুঁতে রেখে ওপরে সিমেন্ট দিয়ে ঢালাই করে দেয়। ঘটনার পর থেকে মো. বাবুল মিয়া ও কবিরাজ মো. হাবিবুর রহমান তাদের পরিবারসহ পালিয়ে যায়। টানা চারদিন পর বটন কান্তি বড়ুয়ার পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে ওই বছরের ১৪ এপ্রিল র্যাবের একটি গোয়েন্দা সংস্থা কবিরাজ হাবিবুর রহমানের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে বটন কান্তি বড়ুয়ার লাশ উদ্ধার করে।
পরে বটন কান্তির ছোট ভাই ছোটন বড়ুয়া বাদী হয়ে ১৪ এপ্রিল শ্রীবরদী থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। তদন্তকারী অফিসার মামলা তদন্ত শেষে আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
এদিকে ঘটনার পর থেকেই খুনি বাবুল মিয়া আত্মগোপনে চলে যান। দীর্ঘ ১৫ বছর যাবত আসামি মো. বাবুল মিয়া জাতীয় পরিচয়পত্র পরিবর্তন করে দেশের বিভিন্ন স্থানে মো. মোস্তফা কামাল ছদ্মনাম ধারণ করে সবজি বিক্রি আসছিলেন। পরবর্তীতে ২০১১ সালের ৩ অক্টোবর শেরপুরের বিজ্ঞ দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল আসামিদের অনুপস্থিতিতে দুই খুনি বাবুল মিয়া ও কবিরাজ হাবিবুর রহমানকে মৃত্যুদণ্ড দেন। পরে র্যাব-১৪ নানাভাবে তথ্যানুসন্ধান করে পলাতক খুনি বাবুল মিয়াকে ঢাকার উত্তরা থেকে গ্রেফতার করে।
র্যাব-১৪ জামালপুর ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার মেজর মো. আবরার ফয়সাল সাদী জানান, গ্রেপ্তার আসামিকে শনিবার শ্রীবরদী থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এ ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে র্যাবের অভিযান ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।