পুলিশের সাবেক আইজি বেনজীর আহমেদ ও তাঁর পরিবারের জাতীয় পরিচয়পত্র, আয়কর নথি ও কোম্পানীর কাগজপত্র সংগ্রহ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গণমাধ্যমের প্রতিবেদন, বেনজীরের বক্তব্য ও নিজস্ব অনুসন্ধান শেষে প্রকৃত সত্য বের করা হবে, বলছে সংস্থাটি।
সম্প্রতি দৈনিক কালের কণ্ঠের এক প্রতিবেদনে সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের বিপুল সম্পদের কথা তুলে ধরা হয়। এতে দাবি করা হয় বেনজীর ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে রাজধানীর অভিজাত এলাকায় একাধিক ফ্ল্যাট, পাঁচ তারকা হোটেলের শেয়ার, গাজীপুর, কক্সবাজার, গোপালগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে শত শত বিঘা জমির মালিকানা রয়েছে।
এ খবর প্রকাশ হওয়ার পর সাবেক পুলিশ প্রধান বেনজীরের বিপুল অবৈধ সম্পদের অভিযোগ অনুসন্ধান করতে দুদকের কাছে আবেদন করেন সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন। এর পরপরই বেনজীর আহমেদের বিপুল অবৈধ সম্পত্তির অভিযোগের অনুসন্ধান চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন আইনজীবী সালা উদ্দিন রিগ্যান।
এই দুই ঘটনার পর গত ১৮ এপ্রিল দুদকের সভায় সাবেক এই পুলিশ প্রধানের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আর এরজন্য একটি তিন সদস্যের তদন্ত কমিটিও গঠন করে দুদক। কমিটির সদস্যরা হলেন, দুদক উপপরিচালক হাফিজুল ইসলাম, সহকারী পরিচালক নিয়ামুল হাসান গাজী ও জয়নাল আবেদীন।
অবশ্য নিজের ও পরিবারের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সাবেক আইজিপি বেনজীর। নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক ভিডিওবার্তায় তিনি দাবি করেন, পরিবার ও তাঁর বিরুদ্ধে মানহানিকর সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে। তিলকে তাল বানিয়ে মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) বলছে, সাবেক আইজিপি বেনজীরের বৈধ আয়ের সাথে সম্পদের সামঞ্জস্যতা খুঁজে দেখতে হবে। বেনজীরের প্রতি পক্ষপাতিত্ব করা হলে তা ভবিষ্যতের জন্য নেতিবাচক নজীর হয়ে থাকবে বলেও দাবি সংস্থাটির।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘অসামঞ্জস্যতার কারণে তিনি অপরাধগুলো করেছেন বলে চিহ্নিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ কারণেই কিন্তু এ বিষয়গুলো আসছে। কিন্তু বাস্তবে কতটুকু আমরা দেখতে পাবো এটা দেখার বিষয়।’
অভিযোগ যাই থাকুক না কেন, আদালতে উপস্থাপনযোগ্য তথ্য প্রমাণ পেলে কাউকেই ছাড় না দেওয়ার কথা জানিয়েছে দুদক। সংস্থাটি বলছে, একইভাবে পর্যাপ্ত প্রমাণ ছাড়া কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেওয়া যায় না।
দুদক কমিশনার জহুরুল হক বলেন, ‘বিভিন্ন তথ্য নিয়ে তা পর্যালোচনা করে যা ব্যবস্থা হয়, যদি তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ হয় তাহলে মামলা করার প্রস্তাব করা হবে। না হলে তারা (তদন্ত কমিটি) ফাইনাল রিপোর্ট দেবে। আর যদি মামলা প্রস্তাব করে কমিশন গ্রহণ করে তাহলে পরবর্তী প্রক্রিয়া শুরু হবে।’ সম্পদের বিষয়ে বেনজীর আহমেদকেও ডাকবে দুদক। প্রয়োজনে অনুসন্ধান কর্মকর্তাদের মুখোমুখি করা হবে পরিবারের সদস্যদেরও।