টানা ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ধসে কক্সবাজারের উখিয়া এবং চকরিয়ায় রোহিঙ্গা মা-মেয়েসহ পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার (৭ আগস্ট) বিকেলে উখিয়া ও চকরিয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। একই সঙ্গে মেরিন ড্রাইভ, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টসহ উপকূলীয় এলাকায় ভাঙন অব্যাহত রয়েছে।
চকরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ফজলুল করিম সাঈদী জানিয়েছেন, পাহাড়ি ঢলে মাতামুহুরি নদীতে ভেসে আসা কাঠ সংগ্রহ করতে গিয়ে রশিদ নামের এক যুবক নিখোঁজ ছিলেন। দুপুর একটার দিকে নিখোঁজ হওয়া যুবকের মরদেহ বিকেল ৩টার দিকে নদীর লক্ষ্যরচর মোহনা থেকে উদ্ধার করা হয়। একই উপজেলার বরইতলী ইউনিয়নের বড়ঘোনা এলাকায় ২ শিশু পাহাড়ধসে দেয়ালচাপা পড়ে নিহত হয়েছে।
স্থানীয়দের বরাতে ছালেকুজ্জামান বলেন, গত এক সপ্তাহ ধরে চকরিয়াসহ কক্সবাজারে থেমে থেমে মাঝারি ও ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। আবহাওয়া অফিসের কক্সবাজার আঞ্চলিক কার্যালয়ের জ্যৈষ্ঠ সহকারী আব্দুর রহমান জানিয়েছেন, রোববার (৬ আগস্ট) বিকেল ৩টা থেকে সোমবার (৭ আগস্ট) বিকেল ৩টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ১০৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সোমবার (৭ আগস্ট) সকাল ৬টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে ৮১ মিলিমিটার। আগামী আরও ৩ দিন বৃষ্টি অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানান।
বৃষ্টি, জোয়ারের পানি ও পাহাড়ি ঢলে চকরিয়া উপজেলার কমপক্ষে ১২ ইউনিয়ন প্লাবিত হয়ে পানিবন্দি রয়েছে মানুষ। এদিকে উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাহাড়ধসে মা-মেয়ে নিহত হয়েছে। সোমবার (৭ আগস্ট) বিকেলে পানবাজার পুলিশ ক্যাম্পের আওতাধীন ক্যাম্প-৯ এর এ/৬ ব্লকস্থ পাহাড়ের পার্শ্বে অবস্থিত আনোয়ার ইসলামের (৩২) শেডের ওপর পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটেছে। খবর পেয়ে পানবাজার পুলিশ ক্যাম্পের সহায়তায় ফায়ার সার্ভিসের একটি টিম দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে স্থানীয় রোহিঙ্গাদের সহায়তায় মাটিচাপা অবস্থায় ওই শেডের সদস্য আনোয়ার ইসলামের স্ত্রী জান্নাত আরা (২৮) এবং তার মেয়ে মাহিম আক্তারের (২) লাশ উদ্ধার করে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিয়োজিত ৮ এপিবিএনের কমান্ডিং অফিসার আমির জাফর।
এদিকে সামুদ্রিক জোয়ারের ঢেউতে মেরিন ড্রাইভ, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের লাবণী, সুগন্ধা পয়েন্ট, মহেশখালী ও কুতুবদিয়া উপজেলার উপকূলীয় এলাকায় ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। মেরিন ড্রাইভের কিছু অংশে জিওব্যাগে বালির বাঁধ তৈরি করে ভাঙন রোধের চেষ্টা করা হলেও নতুন করে আরও কয়েকটি স্পটে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, গত কয়েক দিন ধরে প্রবল বর্ষণ ও পূর্ণিমার উচ্চ জোয়ার অব্যাহত রয়েছে। তার মধ্যে জোয়ারের কারণে পেকুয়ায় কিছু বাঁধ ভেঙে গেছে। এখন যে তথ্য রয়েছে তা হলো কুতুবদিয়াতে ৬টি ইউনিয়নের ৭০ পরিবার, পেকুয়াতে ৮ হাজার পরিবার, মহেশখালীতে ১০০ পরিবার, টেকনাফে ২০০ পরিবার, চকরিয়ায় ৪৫ হাজার পরিবার, কক্সবাজার সদরে ১ হাজার পরিবার, ঈদগাঁও উপজেলায় ১৫০ পরিবার ও উখিয়াতে ৫০ পরিবার পানিবন্দি রয়েছে।
জেলা প্রশাসক আরও বলেন, প্রতিটি উপজেলায় আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। প্রতিটি উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা মাঠে রয়েছে। তারা নৌকা নিয়ে পানিবন্দি মানুষের ঘরে ঘরে যাচ্ছে এবং তাদের আশ্রয় কেন্দ্র নিয়ে আসছে। এ ছাড়াও পাহাড়ধসের শঙ্কায় কক্সবাজার সদর ও পৌরসভায় বেশ কয়েকটি টিম করে দেওয়া হয়েছে। তারা মাইকিং করছে এবং নিরাপদ আশ্রয় সরে আসার জন্য অনুরোধ করছে।