৫২ ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ৭১ মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যন্ত ঢাকা কলেজের অবদান ছিল এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্তের উদাহরণ।যা ইতিহাসের পাতায় লেখা রয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ ও বর্ণাঢ্য জীবনী তরুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে একটি গ্যালারী স্থাপন করেছে ঢাকা কলেজ কতৃপক্ষ। ক্যাম্পাসে মূল ফটক দিয়ে প্রবেশ করতেই হাটি হাটি পাঁয়ে একটু এগিয়ে যেতেই বাম পাশে পরবে লেফটেনেন্ট শেখ জামাল একাডেমিক ভবন। ভবনের দ্বিতীয় তলায় একটি কক্ষে স্থাপন করা হয়েছে ‘হৃদয়ে বঙ্গবন্ধু গ্যালারী’।
সরজমিনে দেখা যায়,সিড়ি বেয়ে উঠতে দেয়ালে দেয়ালে বঙ্গবন্ধুর ছবি,১০ বছর বয়সী শেখ রাসেলের সাথে বাবা বঙ্গবন্ধুর সুন্দর মুহূর্ত বিলবোর্ড দিয়ে সারি সারি সাজানো। আরও একটু সামনের দিকে এগিয়ে যেতেই বড় একটি বিলবোর্ডে ঢাকা কলেজের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস ও পাশেই বঙ্গবন্ধুর একটি বড় ছবি । গ্যালারিতে প্রবেশ করতেই দেখা যায়, জানুয়ারি ১৯৬৯: কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় ট্রাইব্যুনালে নিয়ে যাওয়ার পথে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি, বঙ্গবন্ধুর ছেলে বেলা, ছাত্র জীবন, পারিবারিক জীবন,বংশ-পরিচয়, রাজনৈতিক জীবন, মাঠে লড়াই সংগ্রাম, বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎকারের দুর্লভ ছবি প্রদর্শিত হচ্ছে। পাশাপাশি ১৯৬৬ সালের ৬ দফা,৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ, গণহত্যা, মুক্তিযুদ্ধকালীন বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরের উল্লেখযোগ্য সংবাদ গ্যালারীতে স্থান পেয়েছে। এ ছাড়া গ্যালারীতে পশ্চিম ও দক্ষিণ প্রান্তে ১৯৫২ ও ১৯৭৫ নামে দুইটি তাক আছে।যেখানে বঙ্গবন্ধুর জীবনের বিভিন্ন বই আছে এবং টুঙ্গিপাড়ার বঙ্গবন্ধু সমাধিসৌধ ও বঙ্গবন্ধু পরিবারের বেশ কিছু ছবিও রয়েছে এ গ্যালারিতে।
গ্যালারী প্রদর্শনে করে আসা শিক্ষার্থীরা বলেন,ধন্যবাদ জানাচ্ছি ঢাকা কলেজ প্রশাসনকে। মহান মুক্তিযুদ্ধের স্থপতি, মুক্তিযুদ্ধের অগ্রনায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে এত সুন্দর একটা গ্যালারী স্থাপন করার জন্য, আমরা তার জীবনী ইতিহাস, অবদান সবকিছুই জানতে পারছি। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষন দেয়ালে বিলবোর্ডে সুন্দর করে দেওয়া, যে ভাষণের ফলে তৎকালীন পূর্ববাংলার সর্বস্তরের জনগন ঐক্যবদ্ধভাবে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল একটা স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্য। শিক্ষার্থী নাহিদ ইসলাম বলেন,আমরা ছোট বেলায় বঙ্গবন্ধুর পরিচয়,ইতিহাস জেনেছি। দেশের জন্য তিনি কতটা আত্নত্যাগ করেছেন! ছাত্রজীবন থেকে শুরু করে পরিবার ছেড়ে জীবনের বেশির ভাগ সময় কেটেছে জেলখানায়। আমাদের ক্যাম্পাসে তাকে নিয়ে স্মৃতিবিজাড়িত একটি গ্যালারী স্থাপন করা হয়েছে, দেখে খুব ভাল লাগছে। যেখানে শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও মওলানা আব্দুল হামিদ খানের সাথে বঙ্গবন্ধুর দুর্লভ ছবি, ১৯৪৯ এর যুবনেতা বঙ্গবন্ধু,৬ দফা দাবি,৭ ই মার্চের ভাষণ, ১৯৭২ সালে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এডোয়ার্ড হিথের সাথে লন্ডনের ক্ল্যারিজেস হোটেলে, ১৯৭২ সালের ১০ ই জানুয়ারি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন সহ অনেককিছু ।
শিক্ষার্থী কেন এই গ্যালারী দেখতে আসবেন?এমন প্রশ্ন করা হলে,
প্রশ্নের জবাবে “হৃদয়ে বঙ্গবন্ধু “গ্যালারী দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক ও ঢাকা কলেজ শিক্ষক পরিষদ সাধারন সম্পাদক ড.মো আব্দুল কুদ্দুস সিকদার বলেন,
প্রতিটা শিক্ষার্থীর জানা উচিত বঙ্গবন্ধুর জীবন ও তার সংগ্রাম সম্পর্কে, ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধে তার অবদান সম্পর্কে, তারই ধারাবাহিকতায় সবকিছুই গ্যালারীতে তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়া আমাদের এখানে সম্প্রতি বিভিন্ন ডকুমেন্ট, তার জীবনী সম্পর্কে মূল্যবান বই সংরক্ষিত আছে, শিক্ষার্থীরা আসলে এসব সম্পর্কে জানতে পারবে। সর্বপ্রথম, একটা দেশের নাগরিক হিসেবে বঙ্গবন্ধু ও দেশের মুক্তিযুদ্ধের সম্পর্কে জানা উচিত,তারই ধারাবাহিকতায় আমরা দুইটা অংশই রেখেছি যেন শিক্ষার্থীরা বাঙালি জাতির স্বাধীনতার ক্রমবিকাশের ধারাটা ধারাবাহিকভাবে এক জায়গাতে খুঁজে পায়।
গ্যালারী ছুটির দিন ব্যতীত প্রতিদিন সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৩ টা পর্যন্ত খোলা থাকবে।
প্রসঙ্গত, ১৫ আগস্ট,২০২৩ শিক্ষামন্ত্রী ড.দিপু মণি ‘হৃদয়ে বঙ্গবন্ধু গ্যালারী ‘নামফলক উদ্বোধন করেন।