/
/
/
রাজনৈতিক রসিকতা শরৎচন্দ্র বেঁচে থাকলে গয়েশ্বরকে নিয়ে যা লিখতেন
রাজনৈতিক রসিকতা শরৎচন্দ্র বেঁচে থাকলে গয়েশ্বরকে নিয়ে যা লিখতেন
Relaks News 24
আপলোড সময় : 17 ঘন্টা আগে
রাজনৈতিক রসিকতা শরৎচন্দ্র বেঁচে থাকলে গয়েশ্বরকে নিয়ে যা লিখতেন
Print Friendly, PDF & Email

বিদ্যালয়ে পাঠকালে যারা ইংরেজি ‘টি-স্টল’ প্যারাগ্রাফ পড়েছেন, তাদের জানার কথা টি-স্টল অর্থাৎ চায়ের দোকানকে বলা হয় মিনি সংসদ। শাহবাগের আজিজ মার্কেট থেকে দুই কদম সামনে এমনই এক চায়ের দোকানে আলোচনা হচ্ছিল, সম্প্রতি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের ডিবি অফিসে মধ্যাহ্নভোজ নিয়ে। চায়ে চুমুক দিতে দিতে ডিবি কার্যালয়ে গয়েশ্বরের দুপুরের খাবার খাওয়া নিয়ে একজন বললেন, ‘ভেবে দেখুন, গয়েশ্বর বাবু যদি আরাম করে বসে ভাত না খেয়ে স্যান্ডুউইচ, বার্গার বা ভেজিটেবল রোলজাতীয় কিছু খেতেন, তাহলে কিন্তু এত কথা উঠত না। বাগড়া বেধেছে ওই ভাত খাওয়া নিয়ে।’

তার কথার জবাবে আরেকজন বললেন, ‘খিদা লাগছে–ভাত খাবে না তো কী খাবে। ভাতের মধ্যে যে তৃপ্তি! এগুলা কি আর অন্য কোনো খাবারে আছে। ভাত খেয়ে কী এমন পাপ করেছেন উনি, যে এটা নিয়ে এত উচ্চবাচ্য করতে হবে।’ ভাত খেয়ে পাপ অর্থাৎ অন্নপাপের কথা মাথায় এলে বাংলার জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘বিলাসী’ ছোটগল্পের কথা মনে পড়ে যাওয়া স্বাভাবিক। বাঙালি শখ করে শরৎ না পড়লেও উচ্চমাধ্যমিকের পাঠ্যক্রমে থাকার সুবাদে বাধ্য হয়ে হলেও এই লেখকের ‘বিলাসী’ গল্পটি পড়তে হয়েছে।

বিলাসী গল্পের অন্যতম চরিত্র মৃত্যুঞ্জয় সমাজের কাছে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন কায়স্তের ছেলে হয়ে সাপুড়ের মেয়ের হাতে ভাত খেয়ে। শরৎচন্দ্র নেহাত মারা গেছেন বলে। উনি বেঁচে থাকলে কষ্ট করে মৃত্যুঞ্জয় চরিত্রটি কল্পনা করতে হতো না। জলজ্যান্ত গয়েশ্বর তাকে অন্নপাপের প্রমাণ হাতেনাতে দেখিয়ে দিতে পারতেন। হয়তো এ নিয়ে ছোটগল্প না লিখলেও রাজনীতিসচেতন এ লেখক পত্রিকার কলামে দু-চার লাইন লিখলেও লিখতে পারতেন।

কী লিখতেন শরৎচন্দ্র? এই নিয়ে প্রেসক্লাবের সামনে একটি দৈনিক পত্রিকার সাংবাদিক বললেন, শরৎবাবু বেঁচে থাকলে বলতেন: ‘এই গয়েশ্বরটাই যদি-না ডিবি অফিসে ভাত খাইয়া অমার্জনীয় অপরাধ করিত, তা হইলে ত আমাদের এত রাগ হইত না। আর বিরোধী দলের নেতার সঙ্গে ডিবি প্রধানের সখ্য–এ তো একটা হাসিয়া উড়াইবার কথা! কিন্তু কাল করিল যে ওই ভাত খাইয়া! হোক না সে ধোলাইখালে মার খাইয়াছে, হোকা না তাহার মাথা ফাটিয়াছে! কিন্তু তাই বলিয়া ভাত! লুচি নয়, সন্দেশ নয়, পাঁঠার মাংস নয়! ভাত খাওয়া যে অন্নপাপ! সে ত আর সত্য সত্যই মাফ করা যায় না!’

তার কথায় সায় দিয়ে আড্ডায় থাকা বাকি কয়েকজন বললেন, প্রধানমন্ত্রীর পাঠানো ফলাহার হয়তো ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমানও করেছেন। কিন্তু তাকে নিয়ে কোনো উচ্চবাচ্য হয়নি। কারণ, আম-কাঁঠাল খাওয়ার মধ্যে দোষের কিছু নেই। ভাত হচ্ছে আবেগের ব্যাপার। সেই আবেগকে গলধঃকরণ করেছেন গয়েশ্বর। অনেকে আবার বলছেন, ভাত খেলো তো খেলো, সোনাওগাঁওয়ের মতো পাঁচ তারকা হোটেল থেকে আনা ভাত কেন খেতে গেল? মৃত্যুঞ্জয়ের আত্মপক্ষ সমর্থের সুযোগ না থাকলেও, গয়েশ্বর এখানে ভাগ্যবান। তিনি আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলেছেন, সোনারগাঁও হোটেলের ভাত উনি খাননি। ডিবিপ্রধান হারুনের বাসা থেকে আনা ভাত খেয়েছেন। শুধু ভাত নয়, সঙ্গে একটু সবজি, আর এক টুকরো রুই মাছ। মাছও উনি খেতে চাননি, কিন্তু কিশোরগঞ্জের হাওড়ের মাছ হওয়ায় হারুনের অনুরোধক্রমে খেয়েছেন এক টুকরো।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একজন লিখেছেন, ভাত তো ভাত, সাথে মাছ খেয়ে গয়েশ্বর পড়েছেন আরও বিপদে। মাছে-ভাতে বাঙালির পুরো আবেগকে লোকমায় লোকমায় গলধঃকরণ করেছেন তিনি। তাইতো সরকার দলের এক প্রাজ্ঞ নেতা বলেই বসেছেন, ‘ভাত নাহয় খেলো। রুই মাছ কেন খেলো।’ গয়েশ্বর নিয়ে সেই পোস্টে আরেকজন আবার কমেন্ট করেছেন, বাঙালির আবেগ পর্যন্ত না গেলেও প্রতি লোকমায় যে বিএনপির আবেগকে গিলে ফেলেছেন গয়েশ্বর এটা পরিষ্কার। বিএনপির ভেতর থেকেই এমন কথা উঠছে এখন। কেউ কেউ আবার বলছেন, গয়েশ্বর ভাত খেলেন তো খেলেন, একা কেন খেলেন? সঙ্গে থাকা নেতাকর্মীদের নিয়ে খেতেন!

রাজনীতি নিয়ে একটি সিরিয়াস প্রতিবেদন লিখতে বক্তব্যের জন্য এক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকের কাছে গিয়েছিলেন এক সাংবাদিক। কথায় কথায় গয়েশ্বরের প্রসঙ্গ উঠলে অধ্যাপক বলেন, শেক্সপিয়রের ‘মার্চেন্ট অব ভেনিস’ নাটকটি পড়েছেন? সেখানে শাইলক তার বিরোধীদের বলেছিলেন, ‘আপনাদের সঙ্গে আমি ব্যবসা করতে পারি, হাঁটাচলা করতে পারি, আড্ডা মারতে পারি; কিন্তু পানাহার আর প্রার্থনা এই দুটি কাজ আপনাদের সঙ্গে আমি করতে পারি না।’ শাইলক গল্পের শেষে গিয়ে বিপদে পড়েছেন আর গয়েশ্বর শুরুতেই। কথা প্রসঙ্গে অধ্যাপকের রুমে থাকা একজন ছাত্র রসিকতা করে বললেন, অন্নপাপের ব্যাপারটি অনেক আগেই এসেছে। মহাকবি দান্তের ইনফার্নোতে বলা আছে, বড় সাতটি পাপের পাঁচ নম্বর পাপটি হচ্ছে, পানাহারের প্রতি লোভ। যেটাকে বলা হয় ‘গ্লুটনি’। গয়েশ্বর গ্লুটনি পাপে পিষ্ট হচ্ছেন এখন।

গয়েশ্বর নিয়ে না হয় আলোচনা হলো, প্রেসক্লাবের চায়ের দোকানে একজন প্রশ্ন করে বসলেন: মৃত্যুঞ্জয় যদি গয়েশ্বর হয়, তাহলে বিলাসী কে? উত্তরে আরেকজন বললেন, আর যা হোক ডিবিপ্রধান হারুনকে ভাতকাণ্ড ছাড়া আর কোনো দিক দিয়ে বিলাসীর সঙ্গে মেলানো যাবে না। গয়েশ্বরের প্রতি কারো আবেগ দিয়েও কাউকে বিলাসী বলা যাবে না। কিন্তু গল্পটা একটু ঘুরিয়ে চিন্তা করলে আর প্রেমের সম্পর্ক বাদ দিলে পাঠকদের মনে পড়ার কথা মৃত্যুঞ্জয়ের অন্নপাপের পরপরই বেধড়ক মার খেয়েছিলেন বিলাসী।

গয়েশ্বরের এমন কাণ্ডের পর, এমন বেধড়ক মার খেয়েছেন আর কেউ নন সাবেক কোটা আন্দোলন এবং গণ পরিষদের একাংশের সভাপতি ভিপি নুরুল হক নুর। যদিও দুটি ঘটনার সঙ্গে কোনো মিল নেই উল্লেখ করে যিনি গয়েশ্বরের সঙ্গে শরৎচন্দ্রের ভাষ্য মিলিয়েছেন তিনিই বলে উঠলেন, নুরকে দেখলেই অত্যাচারিত বিলাসীর কথা মনে পড়ে। শরৎচন্দ্র বেঁচে থাকলে নুরকে নিয়ে নিশ্চিত লিখতেন, ‘শুনিয়াছি নাকি বিলাত প্রভৃতি ম্লেচ্ছ দেশে একটা কুসংস্কার আছে, যে দুর্বল এবং নিরুপায় তাহার গায়ে হাত তুলিতে নাই। এ আবার একটা কি কথা! বাঙালি এ কুসংস্কার মানে না। আমরা বলি, যাহারই গায়ে জোর নাই, তাহারই গায়ে হাত তুলিতে পারা যায়। তা সে নুরু-হিরো যাই হোক না কেন।’

চায়ের দোকানের আড্ডা গিয়ে থামল হিরো আলমকে নিয়ে। কয়েকজন যোগ করলেন, ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে হিরো আলমের মার খাওয়া নুরকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে আর কিছু না হোক অন্তত মার খাওয়ায় প্রতিযোগীর সংখ্যা একজন বেড়ে গেছে। তবে রাজনীতির মাঠ বলে কথা, হিরো আলমের আলোচনা ফিকে হওয়ার আগেই আবারও মার খেয়ে নুর প্রমাণ করলেন, হিরো আলমের জন্য তার জায়গা দখল করা এত সহজ হবে না। তবে বিলাসী গল্পের খুড়া আর ন্যাড়া কে হবে, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার পরও ঠিক মেলানো যাচ্ছিল না। হয়তো এর জন্য অপেক্ষা করতে হতে পারে আগামী আরও কয়েকটি চায়ের আড্ডা অবধি।

নিউজটি করেছেন : মাসুদ রানা
{{ reviewsTotal }}{{ options.labels.singularReviewCountLabel }}
{{ reviewsTotal }}{{ options.labels.pluralReviewCountLabel }}
{{ options.labels.newReviewButton }}
{{ userData.canReview.message }}

এ জাতীয় আরো খবর

Untitled design (9)
মৌলভীবাজার আসন-২(কুলাউড়া) চার জন প্রার্থী
Untitled design (10)
নেশাগ্রস্থ বাবার দেয়া আগুনে পুড়ে মরল মেয়ে, দগ্ধ...
Untitled design (11)
রাজধানীতে পুলিশ হত্যার আসামী চট্টগ্রামের যুবদল ...
Untitled design (8)
একটি নক্ষত্রের পতন
Untitled design (3)
মোংলায় ব্র্যাকের উদ্যোগে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ বিষ...
Untitled design (4)
মোংলায় রাস উৎসবে নৌকায় ভোট চাইলেন হাবিবুন নাহার
Untitled design (5)
মোংলার একমাত্র ফেরি চলে জোয়ারে
Untitled design (7)
চট্টগ্রাম-১৩ আসনে আওয়ামীলীগের আস্থা সাইফুজ্জামা...
Untitled design (6)
বিএনপির ডাকা অবরোধে নাশকতার বিরুদ্ধে প্রস্তুত উ...
Untitled design (2)
মৌলভীবাজারে বিএনপির ডাকা দ্বিতীয়দিনের অবরোধে ব...
Untitled design (9)
মৌলভীবাজার আসন-২(কুলাউড়া) চার জন প্রার্থী
Untitled design (10)
নেশাগ্রস্থ বাবার দেয়া আগুনে পুড়ে মরল মেয়ে, দগ্ধ...
Untitled design (11)
রাজধানীতে পুলিশ হত্যার আসামী চট্টগ্রামের যুবদল ...
Untitled design (8)
একটি নক্ষত্রের পতন
Untitled design (3)
মোংলায় ব্র্যাকের উদ্যোগে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ বিষ...
Untitled design (4)
মোংলায় রাস উৎসবে নৌকায় ভোট চাইলেন হাবিবুন নাহার

Log in

Not registered? Join us FREE