ভারতের নয়াদিল্লিতে জি-টোয়েন্টি শীর্ষ সম্মেলন শুরু হয়েছে। সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকালে নয়াদিল্লির প্রগতি ময়দানে তাকে অভ্যর্থনা জানান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সম্মেলনে এবারের স্লোগান- ‘এক বিশ্ব, এক পরিবার, এক ভবিষ্যৎ’। পরে ওয়ান আর্থ শীর্ষক সেশন-ওয়ানে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দুপুরে সৌদি আরবের যুবরাজ ও প্রধানমন্ত্রী মুহাম্মদ বিন সালমানের সাথে করবেন দ্বিপাক্ষীক বৈঠক। এরপর আর্জেন্টিনা ও সাউথ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বসবেন তিনি।
বিকেলে যোগ দেবেন ওয়ান ফ্যামিলি শীর্ষক সম্মেলনের দ্বিতীয় পর্বে। রোববার জি-টোয়েন্টির সমাপনী অনুষ্ঠানসহ আরও কয়েকটি সম্মেলনে যোগ দেবেন শেখ হাসিনা। ৩ দিনের সফর শেষে সেদিনই বিকেলে ঢাকা ফেরার কথা রয়েছে তার। ১৮তম জি-টোয়েন্টি শীর্ষ সম্মেলন আয়োজনে ভারতের রাজধানী নয়া দিল্লিতে কঠোর করা হয়েছে শহরের ট্রাফিক আইন। বন্ধ রাখা হয়েছে স্কুল, ব্যাংক ও সরকারি অফিস। জোরদার করা হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সম্মেলন উপলক্ষ্যে নতুন রূপে সেজেছে দিল্লি। রঙিন ব্যানার-ফেস্টুন ও আলোকসজ্জায় মুখর ভারতের রাজধানী।
এবারের সম্মেলনে মূলত ৬টি এজেন্ডা নিয়ে আলোচনা হবে। যার মধ্যে রয়েছে বিশ্বব্যাপী ঋণ কাঠামো সংস্কার, ঋণ ব্যবস্থাপনায় স্থায়িত্ব এবং ন্যায্যতা নিশ্চিত প্রসঙ্গ। এছাড়াও পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, সব ক্ষেত্রে নারীর ক্ষমতায়ন ইস্যুতে আলোচনা হবে এবারের সম্মেলনে। তবে বিশ্লেষকদের শঙ্কা, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্বনেতাদের মধ্যকার বিভক্তি ভারতের জি-টোয়েন্টি সম্মেলনে প্রভাব ফেলতে পারে।
জি-টোয়েন্টি শীর্ষ সম্মেলনের জন্য ভারতে অবস্থান করছেন ৪০টি দেশের সরকার-রাষ্ট্রপ্রধান ও প্রতিনিধি। এবারের সম্মেলনকে আয়োজক দেশ ভারতের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলছেন বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে ভারতকে প্রধান বৈশ্বিক শক্তি প্রমাণ করতে চান নরেন্দ্র মোদি। এছাড়া, নিজেকে বিশ্বনেতার আসনেও বসাতে চান মোদি। আয়োজক ভারত এবং নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকারের জন্য এবারের সম্মেলন খুবই গুরুত্বপূর্ণ, বলছেন বিশ্লেষকরা। ২০২৪ সালে জাতীয় নির্বাচনের আগে বিশ্ব রাজনীতির প্রধান শক্তির ভূমিকা নিতে চায় ভারত। এছাড়া, নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ বিশ্বনেতা হিসেবেও প্রতিষ্ঠিত করতে চান নরেন্দ্র মোদি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক সাগরিকা ঘোষ বলেন, ‘কয়েক মাসের কর্মকাণ্ড বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, মোদি নিজেকে বিশ্বনেতাদের কাতারে দাঁড় করাতে চাইছেন। বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ায় নিজের অবস্থান শক্ত করতে চান তিনি। জি-টোয়েন্টি সম্মেলনকে কাজে লাগিয়ে ভাবমূর্তি শক্তিশালী করে ২০২৪ সালের নির্বাচনে এগিয়ে যেতে চান মোদি।’ জি-টোয়েন্টি সম্মেলনের ফাঁকে ১৫ জন রাষ্ট্রনেতার সাথে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন নরেন্দ্র মোদি। সদস্য না হলেও দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র দেশ হিসেবে অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশ। যা দুই দেশের সম্পর্ক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছানোর উদাহরণ, বলছেন কূটনীতিকরা।
দীর্ঘদিন পর এক মঞ্চে বিশ্বের তিন পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র, চীন এবং রাশিয়া। চীন ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট অংশ না নিলেও থাকছেন তাদের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিনিধি। জিনপিংয়ের পরিবর্তে থাকছেন প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং আর পুতিনের স্থানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর, প্রথমবার মতো ভারত সফর করছেন, ভারতীয় বংশোদ্ভুত, ঋষি সুনাক। এছাড়া থাকছেন ইইউ, ফ্রান্স, জার্মানি, জাপানসহ গুরুত্বপূর্ণ দেশের নেতারাও। জি-টোয়েন্টির সভাপতিত্ব করা ভারতের জন্য বড় সাফল্য বলে মন্তব্য করেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক।