মরক্কোয় শতাব্দীর সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ২ হাজার ৮০০ ছাড়িয়েছে। ভূমিকম্পের চতুর্থ দিনেও ধ্বংসস্তুপের নিচে থেকে বের করা হচ্ছে মরদেহ। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, বেঁচে যাওয়া মানুষেরা ক্যাম্পের বাইরে সাহায্যের জন্য অধীর হয়ে অপেক্ষা করছেন। এদিকে মরক্কোর উদ্ধারকারী দলের সঙ্গে যোগ দিয়েছে স্পেন, ব্রিটেন ও কাতারের উদ্ধারকারী দল। তারা জীবিতদের খুঁজে বের করতে মরিয়া হয়ে চেষ্টা করছে।
মরক্কোর রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন গতকাল সোমবার জানিয়েছে, মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২ হাজার ৮৬২ জনে দাঁড়িয়েছে। আহত হয়েছেন ২ হাজার ৫৬২ জন। তবে এখনো কত মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন তা অনুমান করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত টিলমেল গ্রামে প্রায় সব বাড়ি বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। ধ্বংসস্তুপের নিচে চাপা পড়ে থাকা অসংখ্যা গৃহপালিত পশুর মরদেহ থেকে দুর্গন্ধ ছড়াতে শুরু করেছে।
টিলমেলের বাসিন্দা ৫৯ বছর বয়সী মোহাম্মাদ এলহাসান বলেন, ভূমিকম্পের সময় আমি আমার পরিবারের সঙ্গে রাতের খাবার খাচ্ছিলাম। হঠাৎ ভূমিকম্প শুরু হলে আমার ৩১ বছর বয়সী ছেলেটা দৌড়ে ঘর থেকে বের হলে প্রতিবেশিদের ছাদ ধসে তার ওপর পড়ে। আমরা পরে অনেক চেষ্টা করেও ছেলেটাকে ধ্বংসস্তুপের নিচে থেকে বের করতে পারিনি। সে সেখানেই মারা গেছে।
মোহাম্মাদ এলহাসান কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ছেলেটা আমাদের সঙ্গে ঘরে থাকলেও বেঁচে যেত। টিনমেল ও অন্যান্য গ্রামের বাসিন্দারা বলেছেন, তারা খালি হাতে ধ্বংসস্তূপ থেকে অনেক মানুষকে টেনে বের করেছেন। মারাকেশ থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরের মৌলে ব্রাহিমে গ্রামের বাসিন্দা হুসেইন আদনাই বলেন, সময়মতো উদ্ধারকারীরা পৌঁছালে হয়তো অনেকেই বেঁচে যেত। আমি আমার শিশু সন্তানদের উদ্ধার করতে পেরেছি।
মৃত ছাড়াল ২১০০, বেঁচে যাওয়াদের সাহায্যের আকুতিমৃত ছাড়াল ২১০০, বেঁচে যাওয়াদের সাহায্যের আকুতি ৩৬ বছর বয়সী ইয়াসিন নউমঘর বলেন, খাবার ও পানির অভাবে ভুগছি। এলাকায় কোনো বিদ্যুৎ নেই। এখন পর্যন্ত খুব সামান্য সরকারি সহায়তা পেয়েছি। আমরা সবকিছু হারিয়েছি। আমাদের পুরো বাড়ি গুঁড়িয়ে গেছে। আমরা চাই, সরকার আমাদের একটু সাহায্য করুক।
গত শুক্রবার স্থানীয় সময় রাত ১১টা ১১ মিনিটে ৬ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে মরক্কোর মধ্যাঞ্চল। বলা হচ্ছে, উত্তর আফ্রিকার এ দেশটিতে গত ১০০ বছরের মধ্যে এটি সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্প। যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা জানায়, ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ভূমি থেকে ১৮ দশমিক ৫ কিলোমিটার গভীরে। আর কেন্দ্রস্থল মারাকেশ শহর থেকে প্রায় ৭১ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে। ১৯ মিনিট পর আবারো অনুভূত হয় ৪ দশমিক ৯ মাত্রার আরেকটি কম্পন। আতঙ্কিত হয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে সড়কের ওপর অবস্থান নেয় মানুষ।