চলচ্চিত্রের ‘মুকুটহীন সম্রাট’খ্যাত কিংবদন্তি অভিনেতা আনোয়ার হোসেনকে হারানোর এক দশক আজ। ২০১৩ সালের এই দিনে (১৩ সেপ্টেম্বর) তিনি পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চিরঘুমের দেশে চলে যান। আজ তার ১০ম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৬৭ সালে ‘নবাব সিরাজউদ্দৌল্লা’ সিনেমায় নাম ভূমিকায় অভিনয় করে ‘বাংলার মুকুটহীন সম্রাট’ উপাধি পেয়েছিলেন এই অভিনেতা। স্কুলজীবনে থাকতেই অভিনয়ে নাম লেখিয়েছিলেন তিনি।
১৯৫৭ সালে ঢাকায় চলে আসেন আনোয়ার হোসেন। ওই বছরই পরিচালক মহিউদ্দিনের সঙ্গে পরিচয় হয় তার। এরপরই অভিনয় জগতে জড়িয়ে পড়েন পুরোদস্তুরভাবে। তার অভিনীত প্রথম সিনেমার নাম ‘তোমার আমার’। এতে দুর্দান্ত অভিনয় করেন তিনি। তারপর একের পর এক সিনেমায় অভিনয় করতে থাকেন। আনোয়ার হোসেনের ভাষ্য, ‘বালকবেলায় স্কুলের নাটকে অভিনয় করতে গিয়েই অভিনয়ের প্রতি আমার আসক্তি। এরপর তখনকার রূপালি জগতের তারকা ছবি বিশ্বাস, কাননদেবী তাঁদের বিভিন্ন ছবি দেখতে দেখতেই এই জগতে আসার ইচ্ছাটি প্রবল থেকে প্রবলতর হয়ে ওঠে। পঞ্চাশ দশকের শেষের দিকে সিদ্ধান্ত নিলাম অভিনয় করবো সারাজীবন।’
১৯৭৫ সালে প্রথম প্রদানকৃত জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার বিজয়ী অভিনেতা ছিলেন এই আনোয়ার হোসেন। নারায়ণ ঘোষ মিতা পরিচালিত ‘লাঠিয়াল’ চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে পুরস্কার দেওয়া হয় তাঁকে। এরপর ১৯৭৮ সালে আমজাদ হোসেনের ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’ সিনেমায় সহ-অভিনেতা হিসেবে অভিনয় করে ব্যাপক প্রশংসিত হন। এ চলচ্চিত্রের জন্য সহ-অভিনেতা হিসেবে আবারও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। এছাড়া ‘দায়ী কে?’ ছবির জন্যও পার্শ্ব-অভিনেতা হিসেবে এ পুরস্কার পান তিনি। ২০১০ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে তাঁকে আজীবন সম্মাননায় ভূষিত করা হয়।
আনোয়ার হোসেন অভিনীত সিনেমাগুলোর মধ্যে ‘নবাব সিরাজউদ্দৌল্লা’, ‘নাগরদোলা’, ‘জীবন থেকে নেয়া’, ‘সূর্যস্নান’, ‘লাঠিয়াল’, ‘জোয়ার এলো’, ‘কাঁচের দেয়াল’, ‘নাচঘর’, ‘দুই দিগন্ত’, ‘বন্ধন’, ‘পালঙ্ক’, ‘অপরাজেয়’, ‘পরশমণি’, ‘শহীদ তিতুমীর’, ‘ঈশা খাঁ’, ‘অরুণ বরুণ কিরণমালা’, ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, ‘রংবাজ’, ‘নয়নমনি’, ‘রূপালী সৈকতে’, ‘ধীরে বহে মেঘনা’, ‘ভাত দে’ উল্লেখযোগ্য। ১৯৩১ সালের ৬ নভেম্বর জামালপুর জেলার সরুলিয়া গ্রামে জন্ম আনোয়ার হোসেনের। বাবা নজির হোসেন ও মা সাঈদা খাতুনের তৃতীয় সন্তান ছিলেন বরেণ্য এই অভিনেতা।