দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ। এর মধ্যে দেখা দিয়েছে আইভি ফ্লুইড বা স্যালাইন সংকট। কিন্তু দেশের একমাত্র সরকারি প্রতিষ্ঠান জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের প্লান্টে স্যালাইন উৎপাদন বন্ধ তিন বছর ধরে। এতে বেসরকারি কোম্পানি ও বিদেশ থেকে স্যালাইন কিনতে হচ্ছে বেশি টাকায়। উৎপাদন বন্ধ থাকায় স্যালাইন ইউনিটের অন্তত ছয়শ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি নষ্ট হচ্ছে।
মহাখালীর জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট। এক সময়ের কর্মচঞ্চল স্যালাইন ইউনিটে এখন সুনশান নিরবতা। ভুগর্ভস্থ পানিকে স্যালাইন তৈরির উপযোগী করা হত এখানে। প্রতি ঘণ্টায় তিন হাজার লিটার পানি বিশুদ্ধ করা গেলেও পুরো প্লান্টই বন্ধ। কোথাও ধুলার স্তর, কোথাও মাকড়সার জালে বন্দি মূল্যবান যন্ত্রপাতি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক বে-নজির আহমেদ জানিয়েছেন, প্রতিদিন ১২ হাজার ব্যাগ স্যালাইন উৎপাদনে সক্ষম জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের আইপিএইচ। তৈরি হত নয় ধরনের আইভি ফ্লুইড বা স্যালাইন। সরবরাহ হত সরকারি সব হাসপাতালে। এতে বছরে কোটি কোটি টাকা সাশ্রয় হত সরকারের। এ ছাড়া দেশের একমাত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে চার ধরনের ব্লাড ব্যাগ, ব্লাড সেট ও ইনফিউশন সেটও বানাত আইপিএইচ। ২০১৮ সালে কেনা হয় আধুনিক অনেক যন্ত্রপাতি।
জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসির উদ্দীন বলেন, মানসম্মত উৎপাদন না হওয়ার অভিযোগে, ২০২০ সালে স্যালাইন ইউনিট বন্ধ করে দেয় ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। এর পর এটি চালুর জন্য নেওয়া হয়নি কোনো উদ্যোগ। তবে প্রতিষ্ঠানের নতুন পরিচালক বলছেন, শিগগির তারা উৎপাদনে ফেরার চেষ্টা করছেন। আমদানি নির্ভরতা কমাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে ১৯৭৩ সালে আইপিএইচে চালু হয় স্যালাইন ইউনিট। ৫০ বছরে বিশ্বমানের হওয়ার বদলে উল্টো বন্ধ হয়ে গেছে উৎপাদন।
ডেঙ্গুর চরম ভয়াবহতায় দিন পার করছে দেশ। এই সময়ে দেখা দিয়েছে আইভি ফ্লুইড বা স্যালাইনের সংকট। ৮০ টাকার একটি আইভি ফ্লুইড কিনতে হচ্ছে ২০০ থেকে ৩০০ টাকায়। অথচ দেশের প্রথম এবং একমাত্র সরকারি এই প্রতিষ্ঠানে তৈরি আইভি ফ্লুইডের দাম ছিল মাত্র ৪২ টাকা।