প্রায় দুই যুগের বেশী সময় ধরে সাংবাদিকতার সাথে যুক্ত রয়েছেন এহসানুল ইসলাম চৌধুরী শামীম। দেশে যেভাবে সংবাদপত্রের প্রতি নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন ঠিক তেমনই প্রবাসেও তিনি খবরের সন্ধানে মগ্ন থাকেন কাজের ফাঁকে। কিন্তু অবসরে অন্য এক শামীম হিসেবে নিজেকে অধিষ্ঠিত করেছেন তিনি। সখের বসে সবজি বাগান তৈরি করে পেয়েছেন সফলতা।
এবার লাউয়ের বাম্পার ফলন হয়েছে সিনিয়র সাংবাদিক এহসানুল ইসলাম চৌধুরী শামীম এর বাগানে।।বিগত ১২ বছর ধরে নিয়মিত বাগান করছেন লন্ডন বাংলা প্রেসক্লাবের সদস্য, চ্যানেল এস টেলিভিশনের রিপোর্টার এহসানুল ইসলাম চৌধুরী শামীম।
তার বাগানে লাউ, কুমড়া, শিম, টমেটো, ডাটা, শসা, কাচা মরিচ, নাগা মরিচ ,লেবু, শাক ইত্যাদির বাহার দেখলে মনেই হবে না যে এটি বিলেতের কোন সবজি বাগান। বরং ভাবতে হবে এক টুকরো বাংলাদেশ বলে। শামীম তার নর্থাম্পটনের হান্সবাড়ির ঘরের পিছনের জমিতে এই বাগান প্রতিষ্ঠা করেছেন। দেশীয় সবজির চাহিদা পুরণ করতেই তার এই উদ্যোগ।
প্রথমে সখের বসে বাগান করলেও এখন এই বাগান পরিচর্যা করা, নানা জাতের সবজির চাষ করা তার নেশায় পরিণত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে শামীম বলেন, ছোট বেলা থেকে আমার বাগান করার শখ ছিলো। দেশে থাকার সময় বাড়ির আঙিনায় নানা ধরনের ফুলের গাছ লাগাতাম। পাশাপাশি অব্যবহৃত জমিতে করতাম মৌসুমি সবজির চাষ। ব্রিটেনে আসার পর থেকেই একটি বাগান প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখতাম। কিন্তু করবো করছি বলে আর হয়ে উঠছিলো না। বারো বছর পূর্বে মনস্থির করে কাজে লেগে পরি। আমার বাগানে নানা জাতের সবজির পাশাপাশি নানা ধরনের ফুল গাছও লাগিয়েছি। যখন সবজি বাগানে কাজ করি তখন মনে হয় আমি বাংলাদেশে আমার মাতৃভূমিতে আছি। এই ভালোলাগাটাও আমাকে উদ্বুদ্ধ করছে সবজি চাষের প্রতি।কোন মাসে লাউ রোপন করতে হয়? মার্চ মাসের প্রথম দিকে ঘরের মধ্যে সিড বা বিচি রোপন করবেন।তার পর মেয়ে মাসের শেষে গাছ বাহিরে বের করবেন।এর আগে বের করলে শীতে নস্ট হয়ে যাবে।
শামীম বলেন, লাউ গাছে পলোনেইট বা পরাগায়ন করা অবশ্যই দরকার। এটা না করলে গাছে ভালো ফলন হয় না। বাংলাদেশে লাউ গাছে পলোনেইট করার দরকার হয় না। কারন বাংলাদেশে পোকা-মাকড় প্রচুর আছে। কিন্তু ব্রিটেনে পোকা-মাকড় খুব কম। তাই এখানে লাউ গাছে পলোনেইট করা দরকার হয়। লাউয়ের ফুল নিয়ে ছোটো লাউয়ের কলির মধ্যে ঘষে লাগানোকে পলোনেইট করণ বলে। তাছাড়া যত্ন ছাড়া কোন জিনিষ ভালো হয় না। তাই অবশ্যই যত্ন করতে হবে।
সিলেট নগরীর শিবগঞ্জ সাদার পাড়ার এহসানুল ইসলাম চৌধুরী শামীম ও তার স্ত্রী। যে কোনো বাঙালি বাগানের আঙিনায় গেলে প্রেমে পড়া ছাড়া উপায় নেই। এক টুকরো প্রশান্তির ছায়া ঘিরে রেখেছে শামীমের শখের বাগান। আর এ শখের বাগান দেখতে ব্রিটেনের বিভিন্ন স্থান থেকে অনেক বাঙালি ভিড় করেন তার বাড়িতে। অনেক সময় অনেকে বাগান করার বিষয়ে তথ্যও জানতে চান শামীমের কাছে। বাগান বিষয়ে মানুষের অনেক প্রশ্নের উত্তর দিতে বা মানুষের এ আগ্রহ অনেক বেশি উপভোগ করেন বলে শামীম আমাদের জানান।
কীভাবে বীজ সংগ্রহ ও চাষ করলেন- জানতে চাইলে শামীম বলেন, প্রতি বছর ফেব্রুয়ারিতে দেশ থেকে বীজ আনি। গত বছর আমি কিছু বীজ সংগ্রহ করেছিলাম; যা দিয়ে এবার বাগান করি। চাইলে আমার মতো অন্যরাও এক বছরের ফসল কিছুটা সংগ্রহ করে ঘরে বসেই বীজ তৈরি করতে পারবেন। ’ প্রবাসজীবনে রেস্টুরেন্ট ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত শামীম, ব্রিটেনে এক নামে সবাই চেনে ‘শেফ শামীম’ নামে। রান্নায় যেমন দক্ষ তেমন বাগানেও দক্ষতার পরিচয় রাখা শামীম আমাদের সঙ্গে তার বাগানের কিছু টিপস শেয়ার করেছেন। তিনি বলেন, ‘বাজারে তো অনেক ধরনের সার পাওয়া যায়। সেগুলোর সঙ্গে প্রবাসেও আপনি বাগানের জন্য সার তৈরি করতে পারবেন।’ তিনি জানান, পাকা কলার বাকল না ফেলে দিয়ে তা পানির মধ্যে তিন-চার দিন ভিজিয়ে রাখলে গাছের পটাসিয়াম হিসেবে কাজ করে; যা গাছের ফলন বৃদ্ধি করে। অন্যদিকে ব্যবহৃত চা পাতা ভিজিয়ে তার পানি গাছে দিলে তা নাইট্রোজেন বা ইউরিয়া সারের কাজ করে; যা গাছের বৃদ্ধি ও সতেজতার সাহায্য করে। শামীম বলেন, ব্রিটেনে ছোট আঙিনায় বাগান করার জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন আগ্রহ। তিনি আশা করেন, সবার বাসার পেছনেই গড়ে উঠুক ছোট করে হলেও একটি সবুজ জীবনের গল্প।