অনুমতি ছাড়া শিশুর প্রবেশ, স্বর্ণ চুরি, এমনকি চোর ঢুকে যাওয়ার মতো একের পর এক ঘটনায় নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে হজরত শাহাজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এ ধরনের ঘটনা বিমানবন্দরের নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হুমকি। এদিকে, বিমানবন্দরে দায়িত্ব থাকা বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানও স্বীকার করলেন নিরাপত্তা-ঝুঁকির কথা। জানিয়েছেন, সব সংস্থাকে সতর্ক করার পাশাপাশি এমন ঘটনা বন্ধে ভবিষ্যতের পরিকল্পনা তৈরি করা হচ্ছে।
গেল সোমবার মধ্যরাতে শাহাজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ঢুকে পড়ে ১২ বছরের এক শিশু। ঢুকেই পড়েনি শুধু, পাসপোর্ট-ভিসা-টিকিট ছাড়াই উঠে বসেছে উড়োজাহাজেও। ২০১৮ সালে একই কায়দায় উড়োজাহাজে উঠে পড়েছিলেন এক পুলিশ সদস্য। এর আগে ৩ সেপ্টেম্বর বিমানবন্দরের কাস্টমস হাউস কর্তৃপক্ষের গুদামঘরের সুরক্ষিত রুমের এসির ডাক্ট ভেঙে আলমারি থেকে সাড়ে ৫৫ কেজি স্বর্ণ চুরি হয় বলে থানায় মামলা হয়। গত ৩১ জুলাই রাতে এই বিমানবন্দরে টার্মিনাল-১ এর ছাদে উঠে পড়ে ৩ চোর। লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড কক্ষের ভেটিলেশন ভেঙে ঢুকে পড়ে একজন। পরে চুরি করতে না পারলেও ১৬ ঘণ্টা আটকে থাকার পর তাঁকে আটক করা হয়।
এর আগে জুনে উড়োজাহাজের কয়েক কোটি টাকার বিশাল আকৃতির ৫০টি পেলেট চুরি হলেও হয়নি কোনো মামলা। আর এপ্রিলে কার্গো টার্মিনালের গুদাম ঘর থেকে আমদানি পণ্য চুরি করে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে বের করে আমদানিকারকের কাছে তুলে দেয় কাস্টমস এজেন্ট। বিমানবন্দরে অস্ত্র নিয়ে ঢুকে যাওয়া মতো ঘটনাও। এসব ঘটনার পর রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ এই স্থাপনার নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এসব ঘটনা প্রমাণ করে বিমানবন্দরের মতো কেপিআই এলাকার নিরাপত্তা-ব্যবস্থা কতটা নাজুক।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক ইশফাক ইলাহী চৌধুরী বলেন, তৃতীয় টার্মিনাল চালু হলে আমাদের দেশের সঙ্গে বিদেশের যোগাযোগ আরও বাড়বে। এমন ঘটনা ঘটতে থাকলে তাঁরা আমাদের বিমানবন্দরে আসবে না। বিমানবন্দরে দায়িত্বরতদের খামখেয়ালি ও অবহেলায় এমন ঘটনা, মন্তব্য অপরাধ বিশ্লেষক ড. তৌহিদুল হকের। তিনি এর জন্য সাময়িক ব্যবস্থা নয়, কঠোর শাস্তির পরামর্শ দিয়েছেন। বিমানবন্দরের নিরাপত্তা-ব্যবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ স্বীকার করছে, এর দায়িত্বে থাকা বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষও। তাই সব বাহিনীকে নিয়ে বিশেষ পরিকল্পনার আশ্বাস চেয়ারম্যানের।
বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম মফিদুর রহমান জানান, এটাকে কীভাবে ভবিষ্যতে আরও কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায় সেদিকে আমরা নজর দিয়েছি। সাম্প্রতিক এই ঘটনাগুলো আমাদের জন্য ভালো শিক্ষা হয়েছে। এসব কাজে লাগিয়ে আমরা আমাদের ব্যবস্থাপনা নতুন করে সাজাব। বিমানবন্দরের মতো জায়গা নিরাপদ না হলে বিদেশিদের কাছে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ার পাশাপাশি পর্যটক হারানোর শঙ্কা বিশ্লেষকদের।