রাজধানীতে টানা ছয় ঘণ্টায় ১১৩ মিলিমিটার বৃষ্টিতে পানি জমে চরম দুর্ভোগ তৈরি হয়েছে ঢাকা কলেজের আবাসিক এলাকায় শিক্ষার্থীরা। পানিবন্দী অবস্থায় আটকে আছেন আটটি ছাত্রাবাসের প্রায় ৫ হাজারেরও বেশি আবাসিক শিক্ষার্থী। এছাড়া রিজার্ভ পানির ট্যাংকও ডুবে গেছে ময়লা পানিতে। ফলে নিরাপদ খাবার পানির সংকটও দেখা দিয়েছে।
শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) কলেজ ঘুরে দেখা যায়, দুটি খেলার মাঠ, সড়ক ও ছাত্রাবাসের করিডোর পর্যন্ত পানিতে থৈথৈ অবস্থা। পানির জন্য কেউ ছাত্রাবাস থেকে বের হতে পারছেন না। যারা জরুরি প্রয়োজনে বের হচ্ছেন তাদের ময়লা পানি ঠেলে মূল সড়কে যেতে হচ্ছে। এছাড়া ছাত্রাবাসের ভেতরের দোকানগুলোতে পর্যাপ্ত খাবার সরবরাহ না থাকায় সকাল থেকে না খেয়ে ছিলেন অনেক শিক্ষার্থী। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েন আবাসিক হলের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
আন্তর্জাতিক হলের শিক্ষার্থী সালমান বলেন, এমন বৃষ্টি এর আগে আমরা দেখিনি। আগেও অনেকবার বৃষ্টি হয়ে মাঠে পানি জমেছে কিন্তু এমন পরিবেশ তৈরি হয়নি। পানি নামার কোনও লক্ষণ নেই। তাছাড়া পানি নিষ্কাশনে কলেজের পুকুর ছিলো অন্যতম ভরসা। কিন্তু গতকালের বৃষ্টিতে পুকুর উপচে পানি উঠে গেছে। আমরা আশাবাদী কলেজ প্রশাসন দ্রুত আমাদের এই পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা করবে।
নাজমুল হাসান নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ঢাকা কলেজের পানি নিষ্কাশনের বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরেই অমীমাংসিত। আবাসিক এলাকার পানি যে দিক দিয়ে নিষ্কাশিত হতো বিজিবি নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে সেটি বন্ধ করে দিয়েছে। এই বিষয়ে বারবার কলেজ প্রশাসনের পক্ষ থেকে মৌখিকভাবে বলা হলেও কোনো লাভ হয়নি। সেজন্য এমন জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে অবশ্যই আলোচনার মাধ্যমে সুষ্ঠু সমাধানে পৌঁছাতে হবে।
অপরদিকে কলেজের উত্তর ছাত্রাবাস, দক্ষিণ ছাত্রাবাস, পশ্চিম ছাত্রাবাস, আন্তর্জাতিক ছাত্রাবাস, আক্তারুজ্জামান ইলিয়াস ছাত্রাবাস, শহীদ ফরহাদ হোসেন ছাত্রাবাস, দক্ষিণায়ন ছাত্রাবাস ও শহীদ শেখ কামাল ছাত্রাবাসের তত্ত্বাবধায়ক সহকারী তত্ত্বাবধায়করাও পরিবার নিয়ে পানিবন্দী অবস্থায় সময় পার করছেন। সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় পড়েছেন কোয়ার্টারের কর্মচারীরা। কোয়ার্টার অপেক্ষাকৃত নিচু ভূমিতে হওয়ার কারণে অধিকাংশ ঘরেই প্রবেশ করেছে পানি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কর্মচারী বলেন, সারারাত না ঘুমিয়ে থাকতে হয়েছে। ঘরের জিনিসপত্র খাটের উপরে তুলে বসে আছি। দ্রুত যদি পানি অপসারণের ব্যবস্থা করা না হয় তাহলে আমরা খুব বিপদে পড়ে যাব। সকাল থেকে খাওয়া-দাওয়ার কোনও ব্যবস্থা নেই। খুব খারাপ সময় পার করছি।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা কলেজ উপাধ্যক্ষ এবং ছাত্রাবাস কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক এ.টি.এম. মইনুল হোসেন ঢাকা বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে পানি নিষ্কাশনের জন্য ব্যবস্থা নিতে যতটুকু সম্ভব তা করা হচ্ছে। আর বিষয়টি ঢাকা কলেজের একক কোনও বিষয় নয়। এখানে সিটি কর্পোরেশনসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থা জড়িত। কলেজ প্রশাসনের পক্ষ থেকে ড্রেনেজ ব্যবস্থার আধুনিকায়নসহ অন্যান্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।