চার মাস আগে বিয়ে হয় নার্স ফারজানা ও নৌবাহিনীর সাবেক সদস্য রনি মিয়ার। চাকরির তিন মাসের মাথায় তিনি নৌবাহিনী থেকে চলে আসেন।এরপর তিনি আটিবাজার এলাকায় কসমেটিকসের দোকান দেন। ১৫ই সেপ্টেম্বর স্ত্রীর পুরনো প্রেমিককে নিয়ে বাগবিতণ্ডা হয়। এরপর খাওয়াদাওয়া শেষে স্ত্রীকে নিয়ে ঘুরতে বের হন রনি। তবে পরিকল্পনা ছিল ভিন্ন। ঘুরতে গিয়ে স্ত্রী ফারজানাকে ধাক্কা দিয়ে নদীতে ফেলে হত্যা করেন।ফিরে এসে কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় স্ত্রী নিখোঁজের জিডিও করেন। কিন্তু এতেও রক্ষা পাননি রনি মিয়া। নিখোঁজের ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ এবং ঘাতক রনিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
রবিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান এসব কথা জানান। তিনি আরও বলেন পুলিশ খোঁজ নিয়ে জানতে পারে, ফারজানা কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে শিক্ষানবিশ নার্স হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। একই হাসপাতালে তার সাবেক প্রেমিক নাদিমও শিক্ষানবিশ নার্স হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। মূলত নাদিমকে ফাঁসাতে রনি পরিকল্পিতভাবে এ তথ্য পুলিশের কাছে তুলে ধরে।
পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে রনি জানায়, গত ১৫ সেপ্টেম্বর সকালে স্ত্রী ফারজানার পুরাতন প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়া বিবাদ হয়। এর আগেও তাদের মধ্যে একাধিকবার ঝগড়া বিবাদ হয়েছে। ঘটনার দিন ফারজানা তার ঘর করবে না এমনকি তাকে ডিভোর্স দিয়ে দেবে বলে জানান। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে সেদিনই ফারজানাকে হত্যার সূক্ষ্ম একটি পরিকল্পনা করেন রনি। যেহেতু রনি মিয়া নৌবাহিনীর সাবেক সদস্য সেহেতু পানির স্রোত সম্পর্কে তার ভালো ধারণা ছিল। আর এ কারণেই সাঁতার না জানায় ফারজানাকে পানিতে ফেলে হত্যার পরিকল্পনা করেন।
ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে ফারজানাকে নিয়ে মোহাম্মদপুরের বসিলা ব্রিজ (শহীদ বুদ্ধিজীবী সেতু) সংলগ্ন নৌ পুলিশ ফাঁড়ির পেছনে নিয়ে যায়। এরপর ফারজানাকে গভীর পানিতে ফেলে হত্যা করে। ফিরে এসে রনি মিয়া স্বজনদের ফোন দিয়ে বলেন যে ফারজানা ঝগড়া করে বাসা থেকে বের হয়ে তার সাবেক প্রেমিকের কাছে চলে গেছে। তাকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এরপর কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় স্ত্রী নিখোঁজের জিডিও করেন। তিনি আরো বলেন, তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে রনির রাত্রীকালীন অবস্থানের বিভিন্ন লোকেশন বের করা হয়। সেটার ওপর ভিত্তি করে পুলিশ ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। ফারজানার স্বামী রনির দেওয়া তথ্যগুলো যাচাইকালে পুলিশ নিশ্চিত হয় যে তার দেওয়া তথ্যগুলো মিথ্যা। এরপর পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।জিজ্ঞাসাবাদে রনি ফারজানাকে হত্যার পরিকল্পনার তথ্য দেয় পুলিশকে। এ ঘটনায় ফারজানার ভাই আরিফুল ইসলাম বাদী হয়ে রনির বিরুদ্ধে কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় মামলা করেন।