লন্ডনের হাউজিং সংকটের ফলে রাজধানীজুড়ে স্থানীয় কাউন্সিলগুলো রীতিমতো একটি বাস্তব ‘মনোপলি গেম’-এ লিপ্ত হয়েছে, যেখানে কেউ কাউকে ছাড়ছে না। দ্রুত বাড়ছে অস্থায়ী ও স্থায়ী আবাসনের চাহিদা। হোটেল বা বেড অ্যান্ড ব্রেকফাস্ট থেকে মানুষকে বের করে স্থায়ী ঠিকানায় নেওয়ার জন্য কঠিন প্রতিযোগিতায় নেমেছে লন্ডনের প্রতিটি কাউন্সিল।
লন্ডনে বর্তমানে প্রতি ৫০ জনে একজন গৃহহীন—এবং তারা অস্থায়ী বাসস্থানে জীবনযাপন করছেন। এই ভয়াবহ হাউজিং সংকটের মধ্যেই লন্ডনের বিভিন্ন কাউন্সিল নিজেদের স্ব স্ব এলাকা ছাড়িয়ে একে অপরের এলাকা থেকেও বাড়ি কেনার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। ব্রেন্ট কাউন্সিলের নেতা মুহাম্মদ বাট জানিয়েছেন, ‘আমাদের কোনো অগ্রাধিকার নেই—আমরা ব্যক্তিগত ক্রেতাদের সঙ্গে বাজারে প্রতিযোগিতা করি, যারা আমাদের তুলনায় অনেক বেশি অর্থ ব্যয় করতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা জানি আমাদের আগামী ৩০–৪০ বছরের বাজেট কতটুকু। ফলে আমরা সীমিত বাজেটে কাজ করি, যেখানে অন্যরা সহজেই আমাদের ছাড়িয়ে যেতে পারে।’ব্রেন্ট কাউন্সিল ২০১৬ সালে ‘Investment 4 Brent (I4B)’ নামে একটি হাউজিং কোম্পানি গঠন করেছে, যেটি বাজারে সস্তা দামে বাড়ি কিনে পরবর্তীতে তা মানসম্মত করে বাসযোগ্য করে। তবে এই সম্পত্তির অর্থ ৩০–৬০ বছরে পরিশোধ করতে হয়।
রেডব্রিজ কাউন্সিল জানিয়েছে, অস্থায়ী আবাসনের খরচ এখন এতটাই বেড়ে গেছে যে অনেক মানুষকে লন্ডনের বাইরেও বসবাস করতে হচ্ছে। সাম্প্রতিক এক তদন্তে দেখা যায়, কেউ কেউ নিজেদের বাসস্থান থেকে ২০০ মাইল দূরেও ঠাঁই পাচ্ছেন। নিউহ্যাম, ইলিং, রেডব্রিজের মতো কাউন্সিল একাধিক পরিবারকে যথাক্রমে মিডলসবরো, নিউক্যাসল এবং স্যান্ডওয়েলের মতো দূরবর্তী এলাকায় স্থানান্তর করেছে।
রেডব্রিজ কাউন্সিলের নেতা কাম রাই বলেন, ‘আমরা গত বছর অস্থায়ী আবাসনে ৫২ মিলিয়ন পাউন্ড ব্যয় করেছি। এই খরচ অপ্রতিরোধ্য। ভাড়া বাড়ছে, হাউজিং সাপোর্ট এলাউন্সের সঙ্গে বাস্তব খরচের ফারাক বাড়ছে। এতে আমরা বাজেট ঘাটতির মুখে পড়ছি।’তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চাই একটি যৌক্তিক ভাড়ার সীমা (rent cap) নির্ধারণ হোক এবং সব কাউন্সিল একসাথে কাজ করুক—না হলে এই প্রতিযোগিতা শুধু সমস্যা আরও বাড়াবে।’
লন্ডনের হাউজিং সংকট শুধু গৃহহীনদেরই নয়, স্থানীয় সরকারগুলোকেও চরম অর্থনৈতিক ও নৈতিক চ্যালেঞ্জের মধ্যে ফেলেছে। সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া এই 'বাস্তব মনোপলি গেম' বন্ধ হবে না—এবং ক্ষতিগ্রস্ত হবে কেবল সাধারণ মানুষ।
অনলাইন ডেস্ক
Comments: