• ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | ২৩ মাঘ ১৪৩১
  • বিশ্ব
    পুরোনো মাঠের নতুন খেলায় তিন ‘খেলোয়াড়’

    image

    ১৯ শতকে আফগানিস্তান নিয়ে রুশ ও ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের মধ্যে লড়াই হয়। ২০ শতকে লড়াই হয় সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে। ভূমিবেষ্টিত দেশটিকে নিয়ে এখন নতুন খেলা শুরু হয়েছে। এই খেলার তিন খেলোয়াড় হলো চীন, ভারত ও পাকিস্তান। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক বিশ্লেষণে এমনটাই বলা হয়েছে।

    দিন দশেক আগে কাবুলের পতনের মধ্য দিয়ে আফগানিস্তানের দখল নিয়েছে তালেবান। তালেবানের সঙ্গে আগে থেকেই পাকিস্তানের সম্পর্ক বেশ গভীর। কাবুলে যখন যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত সরকার ক্ষমতায় ছিল, তখন তাদের বিরুদ্ধে তালেবানের লড়াইয়ে সশস্ত্র সংগঠনটিকে পাকিস্তান সমর্থন দিয়েছে বলে অভিযোগ। তবে এই অভিযোগ পাকিস্তান অস্বীকার করে এসেছে। তালেবানের ঝটিকা অভিযানে কাবুল পতনের পর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান উচ্ছ্বাস নিয়ে বলেছেন, আফগানরা দাসত্বের শেকল ভেঙে ফেলেছে।আফগানিস্তানে নতুন সরকার কেমন হবে, তার রূপরেখা নিয়ে আলোচনা করছে তালেবান। এই প্রক্রিয়ায় পাকিস্তানের কিছু কর্মকর্তা যুক্ত আছেন বলে গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে।


    পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেছেন, আফগানিস্তানে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনৈতিক বন্দোবস্ত চায় ইসলামাবাদ, যা এই অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করবে। একই সঙ্গে ইসলামাবাদ এ কথাও বলেছে যে এ ক্ষেত্রে আফগানদেরই মূল ভূমিকা পালন করতে হবে।

    অতীতে আফগান ইস্যুতে চীনের সম্পৃক্ততা ছিল না। তবে তারা পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত। এখন তারা তালেবানের কাছে শান্তি প্রত্যাশা করে। কাবুল পতনের আগে তালেবানের প্রতিনিধিদের চীন সফর করতে দেখা গেছে।আফগানিস্তানের খনিজ সম্পদ, বিশেষ করে লিথিয়ামের বিপুল মজুত দেশটির ব্যাপারে চীনকে আগ্রহী করে তুলেছে বলে মনে করা হচ্ছে। চীন ইলেকট্রিক যানবাহন তৈরির বিষয়ে জোর দিচ্ছে। এই যানবাহনের অন্যতম প্রধান উপকরণ লিথিয়াম। পাশাপাশি চীনের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও আঞ্চলিক রাজনীতির নতুন প্রেক্ষাপট আফগানিস্তানের ব্যাপারে বেইজিংকে আগ্রহী করে তুলেছে।আফগানিস্তান নিয়ে খেলার তৃতীয় ‘খেলোয়াড়’ ভারত। দেশটি পাকিস্তানের পুরোনো শত্রু। চীনের সঙ্গেও ভারতের বিরোধ রয়েছে। আফগানিস্তানে তালেবানের হাতে যে সরকারের পতন হয়েছে, তার অন্যতম সমর্থক ছিল ভারত। কিন্তু হুট করে কাবুল চলে গেছে তালেবানের হাতে। কাবুল পতনের পর তালেবান-শাসিত আফগানিস্তানের গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হয়ে উঠেছে পাকিস্তান ও তার মিত্র চীন। এতে খুব স্বাভাবিকভাবেই নয়াদিল্লির উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ঊর্ধ্বমুখী।

    চীন বলছে, তালেবানের সঙ্গে তাদের যোগাযোগের মূল লক্ষ্য পশ্চিমাঞ্চলীয় জিনজিয়াং অঞ্চলকে বেইজিংবিরোধী তুর্কিস্তান ইসলামিক মুভমেন্টের (ইটিআইএম) হাত থেকে রক্ষা করা। ইটিআইএম আফগানিস্তানে আশ্রয় নিয়ে তাদের তৎপরতা চালাতে পারে বলে সন্দেহ চীনের।

    সিচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক অধ্যয়নের অধ্যাপক ঝাং লি বলেন, পাকিস্তান হয়তো ভারতের বিরুদ্ধে আফগানিস্তানকে কাজে লাগানোর কথা ভাবছে। কিন্তু চীনের ক্ষেত্রে এই ভাবনা আপাতত অপরিহার্য নয়।

    ঝাং লি বলেন, তালেবানদের ব্যাপারে চীনের প্রাথমিক চিন্তা হলো, আফগানিস্তানে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও মধ্যপন্থী শাসনব্যবস্থা গড়ে তোলা, যাতে আফগানিস্তানকে আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহার করে কেউ জিনজিয়াং বা এ অঞ্চলে সন্ত্রাস ছড়াতে না পারে। এর বাইরে চীনের অন্য কোনো হিসাবনিকাশ থাকলে তা হয়তো ভবিষ্যতে স্পষ্ট হবে।অবশ্য যুক্তরাষ্ট্র বলছে, ইটিআইএম এখন আর আনুষ্ঠানিক কোনো সংগঠন হিসেবে নেই। চীন উইঘুরসহ বিভিন্ন সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীর ওপর নিপীড়ন চালানোর জন্য এই বিষয়কে একটা ‘লেভেল’ হিসেবে ব্যবহার করে। তবে চীন মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।

    নয়াদিল্লিভিত্তিক সেন্টার ফর পলিসি রিসার্চের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের অধ্যাপক ব্রহ্ম চেলানি বলেন, আফগানিস্তানকে শাসন করার জন্য তালেবানদের দুটি জিনিসের দরকার। এক. কূটনৈতিক স্বীকৃতি। দুই. অবকাঠামো ও অর্থনৈতিক সহায়তা। এই দুই বিষয়কে সামনে এনে তা দিয়ে তালেবানকে প্রলুব্ধ করেছে চীন।

    ব্রহ্ম চেলানি বলেন, খনিজসমৃদ্ধ আফগানিস্তানে কৌশলগত প্রবেশের জন্য নতুন প্রেক্ষাপটকে কাজে লাগবে চীন। আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তারের ক্ষেত্রেও তার আফগানিস্তানকে দরকার হবে।

    রাজনৈতিক বিশ্লেষক রাজা আহমদ রুমি বলেন, আফগানিস্তানে ক্ষমতার পরিবর্তনে ভারতের মধ্যে যে অস্বস্তি সৃষ্টি হয়েছে, তা নিয়ে পাকিস্তানে উচ্ছ্বাস তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে দেশটির সামাজিক মাধ্যম ও টেলিভিশনের পর্দায় এই উচ্ছ্বাস দেখা যাচ্ছে।

    রাজা আহমদ রুমি বলেন, পাকিস্তানের নীতিনির্ধারকেরা আফগানিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনির সঙ্গে ভারতের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ককে হুমকি হিসেবে দেখে এসেছেন। কিন্তু তালেবানের হাতে গনির সরকারের পতনের ফলে আফগানিস্তানের ওপর ভারতের প্রভাব কেটে যাওয়াই পাকিস্তানের এই উচ্ছ্বাসের কারণ। তালেবান যখন আগে আফগানিস্তানের ক্ষমতায় ছিল, ভারতের তখনকার স্মৃতি বেশ তিক্ত। আর পাকিস্তানের সঙ্গে তালেবানের যোগসূত্র পুরোনো।

    কাবুলে দায়িত্ব পালন করা ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত জয়ন্ত প্রসাদ বলছেন, ‘আমাদের এখনকার অবস্থা হলো বাস্তবতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়া। আফগানিস্তানে আমাদের দীর্ঘ খেলা খেলতে হবে। তাদের সঙ্গে আমাদের সীমান্ত নেই। কিন্তু সেখানে আমাদের অংশীদারত্ব আছে।’
    ভিডিও
    Comments:
    Sponsered Ad
    Advertisement Advertisement Advertisement Advertisement Advertisement Advertisement Advertisement Advertisement

    loading