পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এক সহকর্মীকে শারীরিক নির্যাতন, অপমানজনক মন্তব্য ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগ উঠেছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার সৌরভ হালদার থানায় দায়ের করা এক লিখিত অভিযোগে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শাকিল সরোয়ারের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তুলেছেন।
লিখিত অভিযোগ অনুযায়ী, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখে মঠবাড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা একটি চিঠি ইস্যু করেন, যেখানে উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারদের চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি না থাকার কথা উল্লেখ করা হয়।বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে চিকিৎসক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
পরবর্তীতে, ১৭ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০:৩০ মিনিটে অভিযুক্ত কর্মকর্তা ডা. শাকিল সরোয়ার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এক জরুরি সভায় সৌরভ হালদারসহ অন্যান্য মেডিকেল অফিসারদের উদ্দেশে অপমানজনক মন্তব্য করেন।অভিযোগকারী(সৌরভ) বলেন, তিনি এবং তার সহকর্মীরা এর প্রতিবাদ করলে অভিযুক্ত কর্মকর্তা তাকে কক্ষে ডেকে নিয়ে কিল, ঘুষি ও থাপ্পড় মারেন। এতে তার শরীরে নীলাফুলা জখম হয় বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
এছাড়াও, সৌরভ হালদার অভিযোগ করেছেন যে, তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেওয়া হয় এবং চাকরি থেকে বরখাস্ত করার হুমকি দেওয়া হয়। ঘটনার পর তিনি মঠবাড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে চিকিৎসা নেন, যার রেজিস্ট্রেশন নম্বর ২৪২২/৩৯।
এই ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শাকিল সরোয়ারের রিলাক্স নিউজ টোয়েন্টিফোরকে জানান,সম্প্রতি, মঠবাড়িয়া হাসপাতালের একজন উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (SACMO) কর্তৃক রচিত একটি প্রেসক্রিপশন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার হাতে আসে, যেখানে সরকারি হাসপাতালের পর্যাপ্ত ওষুধ থাকা সত্ত্বেও বাহিরের ওষুধ লিখে দেওয়া হয়। এতে রোগীদের অতিরিক্ত ব্যয় বহন করতে হয়, যা সরকারি চিকিৎসা সেবার নীতিমালার পরিপন্থী। বিষয়টি নজরে আসার পর, জনস্বার্থে SACMO-দের চিকিৎসকের অনুমতি ছাড়া প্রেসক্রিপশন দেওয়া থেকে বিরত থাকার নির্দেশ প্রদান করি এবং বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল
(BMDC) অনুমোদিত নির্দিষ্ট ৭২টি ওষুধের মধ্যেই তাদের সীমাবদ্ধ থাকার নির্দেশ দেই।
সরকারি দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কিছু স্বার্থান্বেষী মহলের স্বার্থে আঘাত লাগায় তারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি, একটি নিয়মিত সভায়, তিন বছর ধরে সাময়িক বরখাস্ত থাকা SACMO সৌরভ হালদারের হাসপাতালে অবৈধভাবে দায়িত্ব পালনের বিষয়টি আলোচনায় আসে। এসময় তিনি অপ্রাসঙ্গিকভাবে অ্যান্টিবায়োটিক লেখা নিয়ে বিতর্কে জড়ান এবং গোপনে একটি ভিডিও ধারণ করেন। বিষয়টি আমার দৃষ্টিগোচর হলে তিনি প্রথমে অস্বীকার করেন, পরে অফিস স্টাফদের সহায়তায় ভিডিওটি মুছে ফেলা হয়। এ ঘটনায় মঠবাড়িয়া থানার অফিসার ইনচার্জকে অবহিত করা হয়েছে এবং আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আমি দৃঢ়ভাবে বলতে চাই, সেদিনের সভায় কোনো প্রকার শারীরিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটেনি। বরং, উপস্থিত চিকিৎসক, অফিস কর্মকর্তাদের সামনে তিনি তার অনাকাঙ্ক্ষিত কর্মকাণ্ডের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনা পুনরাবৃত্তি হবে না মর্মে মুচলেকা দেন।
আমার দেওয়া নির্দেশনাটি সম্পূর্ণ জনস্বার্থে এবং সরকারি স্বাস্থ্যসেবার মান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে। এটি দেশব্যাপী ভাইরাল হওয়ায় কিছু মহল স্বার্থহানির আশঙ্কায় আমার বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলেছে। বিষয়টি আমি ইতোমধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অবহিত করেছি। এ বিষয়ে মঠবাড়িয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল্লাহ্ আল মামুন জানান, লিখিত অভিযোগ গ্রহণ করা হয়েছে এবং তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তানভীর হাসান, নিজস্ব প্রতিবেদক
Comments: