১২ মার্চ ২০২৫ | ২৭ ফাল্গুন ১৪৩১
বাংলাদেশ
বাবার হাতে ৭ বছরের শিশু মাহিদের খুন

image

মৌলভীবাজারে বাবার হাতে খুন হয়েছে ৭ বছরের মাহিদ নামে এক শিশু। ঘটনার পর শিশুর বাবা খোাকন মিয়া ও দাদি হাওয়া বেগম নিজ ঘরে লাশ রেখে সটকে পড়ে। রবিবার (১৬ই ফেব্রুয়ারি)সন্ধ্যায় মৌলভীবাজার সদর উপজেলার মোস্তফাপুর ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের জগন্নাথপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর থেকে পুরো এলাকাজুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। শিশু খুনের ঘটনায় পুরো গ্রাম, এলাকা জুড়ে শোকাহত মানুষের আর্তনাদ। মৌলভীবাজার মডেল থানার ওসি গাজী মাহবুবুর রহমান জানান, ওই ঘটনায় সদর উপজেলার জেলগেট এলাকা থেকে খোকন মিয়াকে অভিযানে আটক করা হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রের বরাতে জানা যায়, খোকন মিয়া চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। দীর্ঘদিন যাবত এলাকায় মাদক ব্যাবসা করে আসছে বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা। রবিবার বিকালে খোকনের দ্বিতীয় স্ত্রী'র গর্ভে জন্ম নেয়া শিশু মাহিদ বিছানায় মল ত্যাগ করায় ক্ষিপ্ত হয়ে ঘরের বাহিরে এনে ব্যাপকভাবে পিটাতে থাকে ঘাতক পিতা খোকন। এক পর্যায়ে শিশু মাহিদ সেখান থেকে পালিয়ে প্রতিবেশি যবেদা খাতুনের ঘরে আশ্রয় নিলে সেখান থেকে পুনরায় ধরে এনে উপর থেকে মাটিতে ছুড়ে মাড়েন। এরপর শিশু মাহিদের দুই পা ধরে কংক্রিটের পিলারের সাথে আছাড় দিতে থাকলে শিশু মাহিদের নাক দিয়ে রক্ত ঝরতে শুরু করে। এ সময় প্রতিবেশি যবেদা বেগম শিশুটিকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হন। এমন পরিস্থিতিতে শিশুটির অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় খোকন মিয়া নিজেই শিশু মাহিদকে নিয়ে হাজির হয় সদর হাসপাতালে। পরে সেখানকার দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন। এসময় শিশুটির মৃত্যুর কারণ নিয়েও চতুরতার আশ্রয় নেয় ঘাতক পিতা খোকন মিয়া। মৃত্যুর কারণ সেখানে উল্লেখ করে গাছ থেকে পড়ে মৃত্যু হয়েছে বলে। এরপর সেখান থেকে লাশ নিয়ে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার কথা বলে পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে সদর মডেল থানা পুলিশ উপস্থিত হলে সেখানে লাশ ও খোকন মিয়াকে পাওয়া যায়নি। কিছুক্ষণ পর লাশ নিয়ে খোকন নিজ ঘরে হাজির হয়ে লাশ রেখেই সটকে পড়ে। তবে তার প্রথম স্ত্রী ও নিহত শিশু মাহিদ এর আরেক ভাইকে ঘরেই পাওয়া যায়। আশেপাশে তল্লাশি চালিয়েও পুলিশ সেখানে খোকন ও তার মা হাওয়া বেগমের কোন খোঁজ না পেয়ে রাত সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার জেলগেট এলাকা থেকে তাঁকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।

প্রতিবেশি যবেদা বেগম জানান,বাচ্চাটাকে দুই ঠেং ধরে কংক্রিটের পিলারের সাথে মাথা মারতে থাকে। তখন তাঁর নাক দিয়ে রক্ত পড়ছিল। মারধর করার সময় তাকে উদ্ধারে এগিয়ে গেলে আমাকে অন্তত দশহাত দূরে টেনে নিয়ে যায়। তবে এসময় অন্য কেউ সেখানে ছিলনা বলে জানান।

জানা যায়, ১৫ বছর আগে প্রথম স্ত্রী রেখে তানিয়া আক্তার নামের এক নারীকে বিবাহ করে দ্বিতীয় স্ত্রীর মর্যাদায় ঘরে তুলেন খোকন। ওই স্ত্রীর সাথে মনমালন্য হওয়ায় কয়েক বছর আগে স্বামী খোকন মিয়াকে ছেড়ে অন্যত্র বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলেও মাহিদ(৬) ও রাফিদ(৭) নামের দুই শিশুকে রেখে দেন খোকন। এরপর থেকে মা ছাড়া বাবা খোকন মিয়ার কাছেই থাকত দুই শিশু। স্থানীয়রা বলছেন অনেক দিন যাবৎ তুচ্ছ কারণে তাদের দুই ভাইয়ের প্রতি অমানবিক নির্যাতন চালাতেন মাদকাসক্ত বাবা খোকন মিয়া। নির্যাতনের নির্মম দৃশ্য প্রতিবেশির চোঁখে ধরা পড়লেও ভয়ে তাদের কেউ এগিয়ে আসার সাহস করেনি। কারণ খোকন ছিল আক্রমণাত্মক স্বভাব চরিত্রের।




তিমির বনিক, মৌলভীবাজার 

ভিডিও
Comments:
Sponsered Ad
Advertisement Advertisement Advertisement Advertisement Advertisement Advertisement Advertisement Advertisement

loading