কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে একটি সুন্নতে খতনা অনুষ্ঠানে মাংসের বদলে বারবার ঝোল দেওয়া নিয়ে আমন্ত্রিতদের সঙ্গে খাবার পরিবেশকদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয়পক্ষের অন্তত চারজন আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে একজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে কুমারখালী উপজেলার নন্দলালপুর ইউনিয়নের মনোহরপুর গ্রামে রাশিদুল ইসলামের বাড়িতে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সুন্নতে খতনার অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিদের খাবার পরিবেশন করা হচ্ছিল, তখনই মাংসের বদলে অতিরিক্ত ঝোল পরিবেশন করা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়দের মতে, খাবার পরিবেশকরা বারবার ঝোলের গামলা বদল করলেও মাংসের পরিমাণ নিয়ে অভিযোগ চলতে থাকে। একপর্যায়ে কথাকাটাকাটির জেরে সংঘর্ষ শুরু হয়, যা প্রায় এক ঘণ্টা ধরে চলে।
সংঘর্ষে আহতদের মধ্যে রয়েছেন:
মাহফুজুর রহমান শান্ত (২০), মনোহরপুর গ্রামের আকবরের ছেলে। চান্নু হোসেন (৩৫), মনোহরপুর গ্রামের বাসিন্দা। শহিদুল ইসলাম (৪৫), কয়া ইউনিয়নের সুলতানপুর গ্রামের বাসিন্দা। জামিরুল (১৯), সুলতানপুর গ্রামের বাসিন্দা। তাদের মধ্যে শান্তর শরীরের একাধিক স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে এবং মাথায় কয়েকটি সেলাই দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন।
স্থানীয়রা জানান, সুন্নতে খতনার অনুষ্ঠানে প্রায় ৩০০ অতিথিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। খাওয়া-দাওয়ার সময় আকবরের স্ত্রী ও তার পরিবারের সদস্যরা এক টেবিলে বসে ছিলেন। খাবার পরিবেশক রাফির মামা শহিদুল ছিলেন পরিবেশনের দায়িত্বে। চান্নু বারবার মাংসের গামলা পরিবর্তন করে ভালো মাংস দিতে বলেন। একপর্যায়ে অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তি শান্তর মাথায় চেয়ার দিয়ে আঘাত করে, যার ফলে তার মাথা ফেটে যায়। এরপর ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া শুরু হয় এবং পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
আহত শান্ত বলেন, "বারবার মাংসের বদলে ঝোল দেওয়া হচ্ছিল। প্রতিবাদ করায় আমাকে চেয়ার দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। আমি থানায় মামলা করবো।" চান্নু হোসেন অভিযোগ করে বলেন, "আমরা অতিথি হিসেবে গিয়েছিলাম। মাংস চাওয়ায় আমাদের উপর হামলা করা হয়েছে। আমার মাথা ফাটানো হয়েছে, আমি বিচার চাই।"
তবে রাফির মামা শহিদুল পাল্টা দাবি করে বলেন, "আমরা বারবার গামলা বদলে দিয়েছি, কিন্তু চান্নুরা তর্ক চালিয়ে যায়। একপর্যায়ে তারা আমাকে মারধর করে। ভিড়ের মধ্যে কে কাকে আঘাত করেছে, তা আমি জানি না।"
পুলিশের বক্তব্য, কুমারখালী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সোহাগ শিকদার জানান, "ঘটনার পর পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"
একটি পারিবারিক অনুষ্ঠানে খাবার পরিবেশন নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনা শুধু দুঃখজনকই নয়, বরং সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়কেও নির্দেশ করে। এ ধরনের ঘটনাগুলো এড়াতে পারস্পরিক সহমর্মিতা ও ধৈর্য্যশীল আচরণ প্রয়োজন। পুলিশ ইতোমধ্যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে এবং যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে।
অনলাইন ডেস্ক
Comments: