বাংলাদেশের নারী-পুরুষের গড় আয়ু বৈশ্বিক গড়কে ছাড়িয়ে গেছে—জাতিসংঘের নতুন রিপোর্টে উঠে এসেছে এই তথ্য। একইসঙ্গে দেশের ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড ব্যবহারের সম্ভাবনার কথাও বলা হয়েছে। বিশ্বে পুরুষদের গড় আয়ু যেখানে ৭১, বাংলাদেশে তা ৭৪; নারীদের গড় আয়ুও বিশ্বগড় ছাড়িয়ে ৭৭ বছর।
জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (UNFPA) প্রকাশিত ‘বিশ্ব জনসংখ্যা পরিস্থিতি (SWOP) ২০২৫’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের পুরুষদের গড় আয়ু ৭৪ বছর এবং নারীদের ৭৭ বছর, যা বিশ্ব গড় আয়ু (৭১ এবং ৭৬ বছর) থেকে বেশি।
এই তথ্য ৮ জুলাই, গুলশানস্থ জাতিসংঘ ভবনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রকাশ করেন UNFPA-এর বাংলাদেশ প্রতিনিধি ক্যাথরিন ব্রিন কামকং।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যা ১৭ কোটি ৫৭ লাখ, যার অর্ধেক নারী। এর মধ্যে ১১ কোটিরও বেশি কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী (১৫–৬৪ বছর বয়সী) এবং ৩ কোটির বেশি কিশোর-কিশোরী রয়েছে। ১০ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের সংখ্যা ৫ কোটির কাছাকাছি, যা ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড ব্যবহারে দেশের সামনে বিশাল সম্ভাবনার দ্বার খুলেছে।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, দেশের ৭ শতাংশ মানুষ (প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ) এখন ৬৫ বছরের বেশি বয়সী। এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে শ্রমশক্তি সংকোচন এবং বয়স্ক জনগোষ্ঠীর যত্ন ও সুরক্ষা ব্যয় বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
UNFPA-এর মতে, বাংলাদেশের মোট প্রজনন হার (TFR) ২.১ হলেও সামাজিক ও অর্থনৈতিক বাধার কারণে অনেক নারী ও দম্পতি ইচ্ছামতো সন্তান নিতে পারছেন না।
ক্যাথরিন ব্রিন কামকং বলেন, “সংকট জন্মহারে নয়, বরং নারী ও তরুণদের নিজেদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতার অভাবে।”
তিনি আরও বলেন, স্বাস্থ্যসেবার ব্যয়, সন্তানের যত্নের অনুপযুক্ত অবকাঠামো, বাল্যবিবাহের চাপ, নারীর অবৈতনিক শ্রম এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব—সবকিছু মিলিয়ে নারীর প্রজনন সিদ্ধান্ত বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
বাংলাদেশে গড় আয়ু বৃদ্ধি এবং তরুণ জনগোষ্ঠীর আধিক্য দেশের জন্য যেমন আশার বার্তা, তেমনি রয়েছে নীতিনির্ধারকদের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও লিঙ্গ সমতার ওপর গুরুত্ব দিয়ে এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগালে দেশ একটি টেকসই ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যেতে পারবে।
অনলাইন ডেস্ক
Comments: